ব্যালটে গ্রাম কমিটির মোড়ল নির্বাচন, ভূপতিনগরে নজিরবিহীন কর্মকাণ্ডে পুলিসি নিরাপত্তাও!
বর্তমান | ১৭ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: নজিরবিহীনভাবে ব্যালট ছাপিয়ে পুলিসি সুরক্ষায় গ্রাম কমিটির মোড়ল নির্বাচন হল ভূপতিনগর থানার এক্তারপুরে। রবিবার এক্তারপুর পূর্বপাড়ায় গ্রাম কমিটির নিজস্ব অফিসে ভোটাভুটিতে মোট ২৩জন প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১১জন জয়ী হয়েছেন। এই ১১জন ও স্থানীয় দুই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যর কমিটিই আগামী দিনে সালিশি সভা থেকে খাল-বিলে মাছচাষে লেভি আদায় এবং পুজো পরিচালনা সহ যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে। গ্রামের চাঁদা দেওয়া মোট ৩২৬জনের ভোটার তালিকাও প্রকাশিত হয়। তাঁদের মধ্যে ২৮৬জন ভোট দেন। অনেকেই বলছেন, পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়া এরাজ্যে অন্য কোনও জেলায় এভাবে ব্যালটে গ্রাম কমিটির মোড়ল নির্বাচনের নজির নেই। ভোট পরিচালনার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসারও।
পুলিস ও প্রশাসনের মতোই এই জেলার বিভিন্ন গ্রামে সমান্তরাল প্রশাসন চালায় গ্রাম কমিটি। মাছ চাষের জন্য খালবিল লিজে দিয়ে লেভি আদায় করা হয়। এটা মূলত গ্রাম কমিটির মাধ্যমে সংগৃহীত হয়। শুধু লেভি আদায় নয়, গ্রামে গার্হস্থ্য হিংসা থেকে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ কিংবা মেয়ে-বাড়ির বউ পালানোর ঘটনায় সালিশি করে গ্রাম কমিটিই। এর বাইরে বছরভর পুজোপার্বণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন গ্রাম কমিটির মোড়লরাই। তাই মোড়ল হওয়ার জন্য অনেকেই মুখিয়ে থাকেন। গ্রামের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাতের জেরে এখন গ্রাম কমিটি মনোনয়নের পরিবর্তে ভোটাভুটি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ভূপতিনগর থানার জুখিয়া পঞ্চায়েতের এক্তারপুর পূর্বপাড়াতেও একইভাবে ব্যালট ছাপিয়ে, দু’জন হোমগার্ড ও চারজন সিভিক ভলান্টিয়ারের সুরক্ষায় রবিবার গ্রামের মোড়ল নির্বাচন হল।
২০০৩ সাল থেকে এক্তারপুর পূর্বপাড়া গ্রাম কমিটি তৈরি হয়েছে। রবিবার সেই গ্রাম কমিটির নির্বাচনে মোট ২৩জন প্রার্থী হন। তাতে মোট ১১জন নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও ওই এলাকায় দু’জন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পদাধিকার বলে গ্রাম কমিটির সদস্য হবেন। এভাবে মোট ১৩জনের গ্রাম কমিটি আগামী পাঁচ বছরের জন্য গ্রাম পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করবেন। স্থানীয় বজরপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌরচাঁদ পাত্র গ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন। রবিবারও তিনি ভোটে প্রার্থী হন এবং সর্বাধিক ২২৭ভোট পেয়েছেন। ভোটপ্রাপ্তি নিরিখে প্রথম ১১জনকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। এই ভোটারদের আগেই বলা হয়েছিল, প্রত্যেকে ১১জনের বেশি প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন না। ৩২৬ভোটারের মধ্যে ২৮৬জন ভোট দেন। গৌরচাঁদবাবু বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ভোটগ্রহণ নিয়ে থানায় জানিয়েছিলাম। ওরা পুলিস এবং সিভিক ভলান্টিয়ার পাঠিয়েছিল। কোনওরকম গণ্ডগোল ছাড়াই নির্বিঘ্নে ভোট হয়েছে। ১১জন নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া দু’জন পঞ্চায়েত সদস্য গ্রাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
জুখিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি অম্বিকেশ মান্না বলেন, গ্রাম কমিটির মাধ্যমে সালিশি, খাল-বিল লিজে দেওয়া, গ্রামের পুজো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা সহ নানারকম কাজকর্ম সম্পন্ন হয়। গ্রাম কমিটিতে অনেকেই সদস্য হতে চাওয়ায় ভোটাভুটি করতে হয়। এটি অরাজনৈতিক নির্বাচন ছিল।