‘মডেল কালীগঞ্জ’ করাই লক্ষ্য নির্বাচন কমিশনের, পুলিস ও প্রশাসনের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক
বর্তমান | ১৭ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নদীয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতা এখন তুঙ্গে। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে এই উপনির্বাচনকে ‘মডেল’ হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন। সেই লক্ষ্যেই সোমবার কালীগঞ্জ বিডিও অফিসে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। মূলত নিরাপত্তা এবং আচরণবিধি প্রয়োগ সংক্রান্ত বিষয়েই এই বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন নদীয়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ, কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার পুলিস সুপার অমরনাথ কে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর শীর্ষ আধিকারিক সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্তারা। অনেকেই মনে করছেন, এই বৈঠক এবং প্রস্তুতিগুলির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে। স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
কোনও রাজনৈতিক দল ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ১০০মিটারের মধ্যে বুথ করতে পারবে না। এই নির্দেশ কঠোরভাবে কার্যকর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে যেকোনও অনভিপ্রেত পরিস্থিতির দ্রুত মোকাবিলা করতে ক্যুইক রেসপন্স টিমগুলিকে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্লকের অধীন নির্বাচনী কাজে যুক্ত ৫০টি গাড়িতে লাগানো হয়েছে লাইভ ক্যামেরা। এই ক্যামেরাগুলির মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা ভোট প্রক্রিয়া নজরদারি করবেন। কোথাও কোনও অনিয়ম হচ্ছে কি না, তা ‘রিয়েল টাইমে’ খতিয়ে দেখা হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সরাসরি জেলা সফর বিরল ঘটনা। কিন্তু, কালীগঞ্জকে ঘিরে এই সফর এবং প্রস্তুতিই ইঙ্গিত করছে, নির্বাচন কমিশন একে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সূত্রের দাবি, ২০২৬ সালের হাই-ভোল্টেজ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচনকে পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে কমিশন। যার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে এপ্রিল মাস থেকেই। এপ্রিল মাসে সাধারণত ভোটার সংশোধনের কাজ হয় না। কিন্তু, তখনই শুরু হয় কালীগঞ্জ কেন্দ্রের সংশোধনী কার্যক্রম। নির্বাচন কমিশনের নজরে এর মধ্যে দিয়েই ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই উপনির্বাচনের জন্য বুথ সংখ্যা ২৬১ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০৯টি। প্রতি বুথে সর্বোচ্চ ১২০০জন ভোটার রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে দীর্ঘ লাইন বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। সেইসঙ্গে এই প্রথমবার প্রত্যেক প্রিসাইডিং অফিসারকে ব্যক্তিগতভাবে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দায়িত্ব ও আচরণবিধি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ১০০মিটারের মধ্যে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে হবে। ভোটারদেরও ভোট দেওয়ার সময় মোবাইল ফোন জমা রাখতে হবে। এই নিয়ম যাতে কঠোরভাবে পালিত হয়, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের।
সোমবারের বৈঠকের পর সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন এবার কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, কঠোর নিরাপত্তা ও আচরণবিধির যথাযথ প্রয়োগ-এই তিন স্তম্ভেই দাঁড়িয়ে থাকবে কালীগঞ্জ উপনির্বাচন। এই ‘মডেল’ নির্বাচন কমিশনের কাছে ভবিষ্যতের দিশা দেখাবে বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল।
এসপি বলেন, বৈঠক খুব ভালো হয়েছে। ভোটে কীভাবে ডিউটি করতে হবে তা বলা হয়েছে। রাজ্য পুলিস ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর অফিসাররা ছিলেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কীভাবে করতে হবে তার উপর আলোচনা হয়েছে।
কালীগঞ্জের উপনির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক।