• এভাবে বোর্ড ভাঙা যায় না, পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের
    বর্তমান | ১৭ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া ও সংবাদদাতা রঘুনাথপুর: পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য। এই মামলার শুনানিতে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ,  যেভাবে পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে তা ‘আইন বিরুদ্ধ’। এভাবে বোর্ড ভাঙা যায় না। এদিনের রায়ে রাজ্য সরকারের প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশিকাকে নাকচ করে ফের কাউন্সিলারদেরই সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, পুর আইন মেনে ফের চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে হবে। 

    তৃণমূল পরিচালিত রঘুনাথপুর পুরসভার মোট ১৩ জন কাউন্সিলারের মধ্যে শাসক দলের ছ’জন এবং কংগ্ৰেসের একজন কাউন্সিলার গত ২৪ এপ্রিল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ঘোষণা করেন। পুর আইন অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলে তলবি সভা ডাকতে হয় চেয়ারম্যানকে। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সভা ডাকেননি তিনি। সভা ডাকেননি ভাইস চেয়ারম্যানও। পুর নিয়ম অনুযায়ী অনাস্থা প্রস্তাবে সই করা তিনজন প্রতিনিধি তলবি সভা ডাকার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও এই সভার আগেই গত ১৯ মে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়। প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব নেন মহকুমা শাসক। সেই নির্দেশিকার বিরোধিতা করে গত ২২ মে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলার দিনেশ শুক্লা। সোমবার বিচারপতি কৌশিক চন্দের সিঙ্গল বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়।

    এই মামলার অন্যতম আইনজীবী শমিত ভঞ্জ বলেন, পুরসভার নির্বাচিত বোর্ড ভেঙে দিয়ে রাজ্য সরকার যেভাবে প্রশাসক নিয়োগ করেছিল, তা আইন বিরুদ্ধ বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। রাজ্য সরকারের জারি করা ওই নির্দেশিকাটিকে নাকচ করে দেওয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলারদের নিজেদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন থেকে রঘুনাথপুর পুরসভায় আর প্রশাসকের কোনও ক্ষমতা থাকল না। আগামী দিনে কাউন্সিলাররা ভোটাধিকারের মাধ্যমে নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করবেন।

    আদালত সূত্রের খবর, এদিনের শুনানিতে সরকার পক্ষের আইনজীবীদের তরফে বারংবার কাউন্সিলারদের দুর্নীতির বিষয়টিকে ঢাল করা হয়। তাঁরা বিচারপতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, পুরসভার কাউন্সিলারদের একাংশ বহু অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত। স্বচ্ছ ভারত অভিযান, মা ক্যান্টিন থেকে শুরু করে স্ট্রিট লাইট লাগানোর নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা টাকা তছরুপ করেছেন কাউন্সিলাররা। ফলে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ কাউন্সিলারদের কোনওভাবেই ক্ষমতা যাতে ফিরিয়ে না দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে সওয়াল করেন সরকার পক্ষের আইনজীবীরা। যদিও তা গ্রাহ্যই করেননি বিচারপতি কৌশিক চন্দ। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, কাউন্সিলাররা যদি কোনও অন্যায় করে থাকেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আইন মেনে কাউন্সিলারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যেতে পারে। কিন্তু কাউন্সিলারদের কোনও রকম শোকজ পর্যন্ত না করে হঠাৎ করে বোর্ড ভেঙে দেওয়া যায় না।

    এদিনের রায়ে সম্পর্কে বিজেপি কাউন্সিলার বলেন, রাজ্য সরকার আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চেয়েছিল। নিজেদের দলের কাউন্সিলারদের দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসবে দেখে সব কাউন্সিলারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। কিন্তু আদালতে রাজ্য সরকার ঘাড়ধাক্কা খেল। কংগ্রেস কাউন্সিলার দেবযানী পরামাণিক বলেন, এটি নৈতিক জয়। তবে অভিযুক্ত কাউন্সিলারদের দুর্নীতির বিষয়টি যেন কোনওভাবে চাপা না পড়ে যায়। এনিয়ে স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। অনাস্থা নিয়ে আসা কাউন্সিলারদের অন্যতম প্রণব দেওঘরিয়া, প্রাক্তন চেয়ারম্যান তরণী বাউরি বলেন, আদালতের রায়ের কপি এখনও পর্যন্ত হাতে পাইনি। তাই কোনও মন্তব্য করব না।
  • Link to this news (বর্তমান)