মোস্তাফা কামালদের সাত পুরুষের জন্মভিটে মন্তেশ্বরের কুলুট গ্রামে। পেটের দায়ে ২০বছরের বেশি সময় ধরে তিনি মুম্বইয়ে রয়েছেন। প্রথমদিকে একটি সংস্থার অধীনে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সেই কাজ চলে যাওয়ার পর ঝালমুড়ি বিক্রি করতে শুরু করেন। ছোট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে ভালোভাবেই দিন কাটছিল তাঁর। আচমকা মুম্বই পুলিস তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ বলে পাকড়াও করে। তিনি চিৎকার করে সেই সময় বারবার বলতে থাকেন, আমি ভারতীয়। পশ্চিমবঙ্গের মন্তেশ্বরে আমাদের বাড়ি রয়েছে। ভোটার, আধার কার্ড সব দেখাতে পারি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মুম্বই পুলিস তাঁর কথা বিশ্বাস না করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। বিএসএফ সময় নষ্ট না করে তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজনকে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেয়। দীর্ঘ আলোচনার পর আবার তাঁদের ফেরানো হয়। মুম্বই পুলিস হয়তো পরে নিজেদের ভুল স্বীকার করবে। কিন্তু, মোস্তাফা কামাল এবং তাঁর পরিবারের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেল, তার দায় কে নেবে? ৮০ ছুঁইছুঁই মায়ের চোখের জলের হিসেব কে দেবে? এমনই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে মন্তেশ্বর।
মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কুলুট গ্রামের একপ্রান্তে মোস্তাফা কামালদের বাড়ি। সেখানেই থাকেন তাঁর মা কেরিমা খাতুন। ছেলেকে বাংলাদেশে পাঠানোর খবরে তাঁর রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল। ঠিকমতো খেতেও পারেননি। ছেলে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত তাঁর দুশ্চিন্তা কাটছে না। তিনি বলেন, এখানেই আমার দাদু, তাঁর দাদুরা জন্মগ্রহণ করেছেন। আমার বয়স ৮০ হতে চলল। বাংলাদেশে আমাদের সাত পুরুষের কেউ নেই। তারপরও আমাদের ‘বাংলাদেশি’ বানিয়ে দেওয়া হল। ছেলে সেই কৈশোর থেকে মুম্বইয়ে রয়েছে। তার গায়ে মিথ্যে তকমা সেঁটে দেওয়া হল। এদেশ আমাদের। যে যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, তাড়াতে পারবে না।
গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, মুম্বই পুলিস ভোটার কার্ড, আধার কার্ড না দেখেই ওঁকে বাংলাদেশি সাজিয়ে দিল। বাংলায় কথা বললেই কেউ বাংলাদেশি হয়ে যায় না। এদেশের একটি রাজ্যের মাতৃভাষা বাংলা। এটা মুম্বই পুলিসের জানা উচিত ছিল। এভাবে চলতে থাকলে বাংলার ছেলেমেয়েরা বাইরের কোনও রাজ্যে কাজ করতে যেতে ভয় পাবে। মোস্তাফা মুম্বই পুলিসকে বারবার বলেছিলেন যে তাঁর বাড়ি এরাজ্যে। পুলিস তাঁর কথা যাচাই করার জন্য ভোটার বা আধার কার্ড দেখতেই পারত। তা না করেই বাংলাদেশি বলে তাঁকে ‘পুশব্যাক’ করে দেওয়া হল।
মুম্বই পুলিসের এই কীর্তি জানার পর গ্রামের বাসিন্দারা মোস্তাফা কামালদের বাড়ির সামনে ভিড় করছেন। সবার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। তাঁদের অনেকেরই ছেলে কর্মসূত্রে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যে থাকেন। তাঁদের কাউকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে না তো? এই আশঙ্কাতেই এখন তাঁদের দিন কাটছে।