সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
ভারত সরকারের উদ্যোগে এই প্রথম ‘চাইল্ড গ্রোথ স্ট্যান্ডার্ড’ তৈরির সমীক্ষা শুরু হলো দেশে। এই সমীক্ষা করছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। আর এই গবেষণার সঙ্গে নাম জুড়ে গেল জঙ্গলমহলের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে পুরুলিয়া ও মেদিনীপুরের।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু বিশ্বজুড়ে ৬টি দেশকে ধরে এই সমীক্ষা করত এত দিন। ফলে এক-একটি দেশের দু’একটি জায়গায় নমুনা সংগ্রহ করে তার নিরিখেই প্রকাশ করা হতো রিপোর্ট। সেটিও শেষ বার হয়েছিল ২০০৬ সালে।
নতুন তথ্য না থাকায় এখনও ২০০৬ সালের তথ্যকেই স্ট্যান্ডার্ড ধরে শিশুর পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বার আইসিএমআর শুরু করল ‘ইন্ডিয়ান চাইল্ড গ্রোথ রেফারেন্স ডেভলপমেন্ট রিসার্চ’।
অর্থাৎ ১৮ বছর পরে শুরু হলো সমীক্ষা। এই সমীক্ষায় শূন্য থেকে দু’বছর বয়সী সমস্ত শিশুর উচ্চতা ও ওজন পরিমাপের পাশাপাশি মাস ইনডেক্স তৈরি করা হবে। তার নিরিখেই তৈরি হবে ‘চাইল্ড গ্রোথ স্ট্যান্ডার্ড’।
ভারতকে ৬টি জ়োনে ভাগ করে এই কাজ শুরু হয়েছে। এই ছ’টি জ়োন হলো — শিলং (নর্থ-ইস্ট জ়োন), হায়দরাবাদ (সেন্ট্রাল জ়োন), পুনে (ওয়েস্ট জ়োন), দিল্লি (নর্থ জ়োন), বেঙ্গালুরু (সাউথ জ়োন) এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া (ইস্ট জ়োন)।
পুরুলিয়া জ়োনের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর করা হয়েছে পুরুলিয়ার সিধো কানহু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রোপলজি অ্যান্ড ট্রাইবাল স্টাডিজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তথা পাবলিক হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন রিসার্চের সমীরণ বিশোইকে।
এছাড়াও রয়েছেন পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেন এবং প্রসূতি বিশেষজ্ঞ শিবশঙ্কর মুর্মু।
সমীরণ বিশোই বলেন, ‘আমাদের জ়োনের কাজটি পুরুলিয়া এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং এই দুই জেলার নানা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া শিশুদের নিয়ে হবে। টানা দু’বছর ধরে চলবে শিশুদের নিরীক্ষণ। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে কাজটি সম্পূর্ণ করার কথা।’
এই কাজটি করতে পুরুলিয়া জ়োনকে ৩.৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কোন কোন শিশুর সঠিক বৃদ্ধি হচ্ছে না এবং কেন হচ্ছে না, কোন শিশু কোন খাবার খাচ্ছে এবং কত পরিমাণে খাচ্ছে, যার ফলে তাদের বৃদ্ধির হার কেমন, এই সমস্ত বিষয় চিহ্নিত করাই হলো এই সমীক্ষার কাজ। যাতে সমস্যা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
সে জন্য বিভিন্ন মাপকাঠির নিরিখে প্রথমে সুস্থ প্রসূতিকে চিহ্নিত করা হয়। এমনই ৫০০ জন প্রসূতিকে সমীক্ষার আওতায় আনা হবে। দেখা হবে, তাঁদের মধ্যে কতজন সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন, কোন কোন ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটছে, জন্মের সময়ে সন্তানদের ওজন ও উচ্চতা কত, কোন বয়সে উচ্চতা কতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ওজন কতটা বাড়ছে, কোন কোন বয়সে ও মরশুমে জ্বর-সর্দি বা অন্যান্য শরীর খারাপের ঘটনা ঘটছে।
সমীরণ বলেন, ‘এই ৬টি জ়োনের এক–এক জায়গার পরিবেশ, তাপমাত্রা, খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবহওয়াও একদম বদলে যায়। যেহেতু একজন শিশু জন্ম নেওয়ার পর থেকে টানা দু’বছর ধরে তাকে সমীক্ষার আওতায় রেখে সমস্ত দিকে নজর রাখা হবে, ফলে বিভিন্ন তাপমাত্রা–আবহাওয়া–খাদ্যাভ্যাস থেকে বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধির তারতম্যও লক্ষ্য করা যাবে।
শেষে ৬টি স্থানের তথ্যকে মিলিয়ে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ‘গ্রোথ স্ট্যান্ডার্ড’ তৈরি করা হবে।’
তিনি জানিয়েছেন, সমীক্ষার ফল থেকে যে মানদণ্ড তৈরি হবে, তা থেকে স্থির করা যাবে পুষ্টির কতটা ঘাটতি রয়েছে। খামতিই বা কোথায়? সেই ঘাটতি পূরণ করলেই মিলবে সঠিক বৃদ্ধি। অপুষ্টি দূর করতে এই ঘাটতি বা খামতি পূরণে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যই এই সমীক্ষা।
সমীক্ষা রিপোর্টের মানদণ্ডেই সারা ভারতের শিশুদের মধ্যে সমতা আনতে পুষ্টির মূল্যায়ন করে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবার থেকে মিড ডে মিলের খাবারের মেনুতেও পরিবর্তন আনা হতে পারে। চাইল্ড ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে পরিবর্তন। এ সবই করা যাবে সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরেই।