এই সময়, পুরুলিয়া: অসহ্য গরম, পাখা চললেও ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর। সকাল সাড়ে সাতটা-আটটাতেই রোদের তীব্রতায় বাড়ির বাইরে পা রাখা যাচ্ছে না। পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্র সূত্রের খবর, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির আশেপাশে থাকলেও আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় ৪৩ ডিগ্রির অনুভূতি হচ্ছে।
এই অবস্থায় সকালে স্কুল চেয়ে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কোনও সাড়া মেলেনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজীবলোচন সরেনের মন্তব্য, ‘গরমের কথা ভেবে সকালে স্কুল করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এখনও অনুমতি মেলেনি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রের খবর, রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তীব্র গরম ও আর্দ্রতাজনিত পরিস্থিতির কথা স্বীকার করলেও সকালে স্কুল করা নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি।
বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ১২ জুন রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে সমস্ত জেলার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, গরম ও আর্দ্রতাজনিত কারণে ১৩ এবং ১৪ জুন স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ থাকবে। নির্দেশিকা মেনে সোমবার খুলেছে স্কুল।
তীব্র গরমের জেরে জেলার কয়েকটি জায়গা থেকে পড়ুয়া থেকে শিক্ষকের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর মিলেছে। মানবাজার-১ ব্লকের গোপালনগর নিউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক গত সপ্তাহে স্কুলে আসার পরে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন।
দ্রুত তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঝালদা-২ ব্লকের একটি বিদ্যালয় থেকেও এক পড়ুয়ার অসুস্থ হওয়ার খবর মিলেছে। নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক নিলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘পুরুলিয়ায় গরম কত তীব্র, তা সকলেই জানেন।
শিক্ষকতায় যোগ দেওয়ার আগে দেখেছি, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত জেলায় সকালেই স্কুল হতো। তার মধ্যে গরমের ছুটি পড়ত। এ বারই দেখছি তার ব্যতিক্রম হলো।’
গরমের ছুটির পরে ২ জুন স্কুলগুলি খুলেছে। সে দিনই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তীব্র তাপপ্রবাহের কথা উল্লেখ করে সকালের স্কুলের সময় নিয়ে নির্দেশিকা জারি করে। নির্ঘণ্ট ছিল সকাল ৬.৩০ থেকে বেলা ১১.০০।
শনিবার স্কুল হবে সকাল ৬.৩০ থেকে ৯.০০ পর্যন্ত। নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, ৩ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত এ ভাবে স্কুল হবে। পরের দিনই অন্য এক নির্দেশিকা জারি করে আগের নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অর্থাৎ স্কুলের নির্ঘণ্ট দাঁড়ায় সকাল ১০.৩০ থেকে বিকেল ৪.০০ পর্যন্ত।
প্রশ্ন উঠছে, স্কুল খোলার পরে যে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাল্টে গেল কেন? এবিপিটিএ–র দাবি, সকালে স্কুল শুরু করার নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে জেলার কাছে জবাবদিহি চাওয়া হয়, কেন এই নির্দেশিকা জারি হলো? এর পরেই তড়িঘড়ি আগের নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নীরবতা নিয়ে বিস্মিত পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি বিমলকান্ত মাহাতো। তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রাবস্থা থেকে দেখে আসছিস পুরুলিয়ায় এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সকালেই স্কুল হয়।
এ বার কেন হলো না, জানি না। তবে আমরাও সকালে স্কুলের দাবি জানিয়েছি।’ পুরুলিয়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) কানাইলাল বাঁকুড়ার জবাব, ‘রাজ্য থেকে সকালে স্কুল নিয়ে কোনও নির্দেশিকা আসেনি।’