• সবাইকে নিয়ে চলতে হয়, নতুন OBC লিস্ট নিয়ে ব্যাখ্যা মমতার
    এই সময় | ১৭ জুন ২০২৫
  • এই সময়: নতুন করে ওবিসি সমীক্ষা ও নয়া ওবিসি লিস্ট নিয়ে গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় ব্যাখ্যা দেওয়ার সময়েই বিরোধী বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, রাজ্য সরকার আসলে ঘুরপথে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাড়তি সুবিধা দিতে চাইছে।

    সেই অভিযোগ উড়িয়ে নয়া ওবিসি তালিকা নিয়ে সোমবার বিধানসভায় বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর স্পষ্ট কথা, যে ১৪০টি শ্রেণি বা জনগোষ্ঠীকে নতুন ওবিসি লিস্টে আনা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ ভাবে তাদের আর্থ-সামাজিক অনগ্রসরতার উপরে ভিত্তি করেই করা হয়েছে। আরও ৫০টি শ্রেণিকে নিয়ে সমীক্ষা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার।

    ১৪০টি শ্রেণিকে নতুন ওবিসি লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়ে গত মঙ্গলবার বিধানসভায় বিবৃতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার দিন কয়েকের মধ্যেই রাজ্য সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তর পরিসংখ্যান দিয়ে জানায়, যে ১৪০টি শ্রেণি ইতিমধ্যে ওবিসি তালিকায় এসেছে, তার মধ্যে ৮০টি শ্রেণি মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত।

    অ-মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ৬০টি শ্রেণি নয়া ওবিসি তালিকায় এসেছে। অর্থাৎ সার্বিক ভাবে ওবিসি তালিকাভুক্ত ১৪০টি শ্রেণির মানুষের ৫৭.১৪ শতাংশ হলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের।

    রাজ্য সরকার এই ব্যাখ্যা দিলেও শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি প্রচার শুরু করেছে, ‘হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃত ভাবে বঞ্চিত করে শুধুমাত্র মুসলিমদের সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই (ওবিসি) তালিকা তৈরি করা হয়েছে।’

    এই প্রেক্ষাপটে সোমবার বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে ওবিসি সংক্রান্ত বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান সবাইকে নিয়ে আমাদের চলতে হয়। রাজ্যে ২৬ শতাংশ এসসি–দের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে।

    এঁরা সবাই নিজেদের হিন্দু মনে করেন। এসটি–দের জন্য ৬ শতাংশ সংরক্ষণ রয়েছে। তাঁরাও হিন্দুদের মধ্যেই পড়েন। রাজ্যে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। সংখ্যালঘুদের খেতে–পরতে দেবো না, এটা হয় না। এই ১৪০ শ্রেণির ওবিসি সংরক্ষণ আর্থ–সামাজিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে হয়েছে।’

    বিধানসভার অধিবেশনের পরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেও ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে মন্ত্রীদের প্রচার করা এবং প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

    তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এসসি এবং এসটি মিলিয়ে মোট যে ৩২ শতাংশ সংরক্ষণ ইতিমধ্যেই রয়েছে, সেখানে ধর্মীয় দিক থেকে দেখলে মূলত হিন্দুরাই আছেন। অর্থাৎ সংরক্ষণ ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই অমুসলিম।

    এই পটভূমিতে ওবিসি সরংক্ষণ মোট ১৭ শতাংশ করা হয়েছে। এই ১৭ শতাংশের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, অতি-অনগ্রসর হিসেবে যাঁদের ধরা হয়, তাঁরা ওবিসি–এ ক্যাটিগরিতে রয়েছেন।

    এই ক্যাটিগরিতে মোট ৪৯টি শ্রেণির মধ্যে ৩৬টি শ্রেণি মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত, ১৩টি অ–মুসলিম শ্রেণি রয়েছে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ৭৩.৪৭ শতাংশ হলেন মুসলিম। ওবিসি–বি ক্যাটিগরিতে ৪৪টি শ্রেণি মুসলিম এবং ৪৭টি শ্রেণি অ-মুসলিম।

    এ ক্ষেত্রে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত রয়েছেন ৪৮.৩৫ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে একটি বিষয় স্পষ্ট, এসসি-এসটি-ওবিসি মিলিয়ে মোট ৪৯ শতাংশ সংরক্ষণের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্তরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

    এসসি-এসটি সংরক্ষণের মধ্যে মুসলিমরা আসতে পারবেন না, একমাত্র ১৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণের মধ্যেই তাঁরা আসতে পারবেন। তাই ওবিসি–এ ক্যাটিগরিতে শতাংশের হিসেবে মুসলিমদের উপস্থিতি বেশি।

    এই প্রসঙ্গে মমতা এ দিন বিধানসভায় বলেন, ‘দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা বেশি। দেশভাগের সময় থেকেই এটা রয়েছে। আমরা নতুন করে কিছু করিনি। ...এঁদের মধ্যে যাঁদের কিছু নেই, তাঁদের তো (ওবিসি তালিকায়) যুক্ত করতে হবে।

    মুসলিমদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। কেউ ওবিসি–এ থেকে ওবিসি–বি হয়েছেন। কেউ ওবিসি–বি থেকে ওবিসি–এ হয়েছেন।’ সংখ্যালঘুদের মধ্যে নতুন ওবিসি তালিকা নিয়ে যাঁদের ক্ষোভ রয়েছে, তাঁরা ওবিসি কমিশনের কাছে তাঁদের বক্তব্য জানাতে পারবেন বলেও মমতা জানিয়েছেন।

  • Link to this news (এই সময়)