• মুর্শিদাবাদের এই মন্দিরেই কি চাঁদ সওদাগর প্রথম মনসা পুজো করেছিলেন? মানুষের বিশ্বাস আজও অটুট দেবীকে নিয়ে...
    আজকাল | ১৭ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'মনসামঙ্গল' কাব্যের চাঁদ সওদাগরের গল্প তো আমাদের সকলেই জানা। কিন্তু শিবভক্ত চাঁদ সওদাগর কোথায় মা মনসাকে বাঁ হাতে পুজো নিবেদন করেছিলেন সেটা কি জানেন? 

    মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি শহরের অদূরেই পার্বতীপুর এলাকায় কানা ময়ূরাক্ষী নদীর পাশে তেঁতুল গাছের নীচে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন একটি মনসা মন্দির। জেলার বহু মানুষের বিশ্বাস এই মন্দিরেই চাঁদ প্রথম মা মনসার পুজো করেন। 

    লোকমুখে প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, চাঁদ সওদাগর একদিন নিজের নৌকা নিয়ে কানা ময়ূরাক্ষী নদীর উপর দিয়ে বাণিজ্য করতে যাচ্ছিলেন। পার্বতীপুর এলাকার কাছাকাছি আসতেই তাঁর নৌকায় কিছু সমস্যা দেখা দেয় এবং তিনি পার্বতীপুরের এলাকায় কানা ময়ূরাক্ষী নদীর পাশে একটি তেঁতুল গাছে তাঁর নৌকা বেঁধে রাখেন। সেই সময় কাছেই মা মনসার মন্দিরটি দেখতে পেয়ে সেখানে দেবীর পুজো করেন। কথিত রয়েছে, এরপর থেকেই বাঙালির ঘরে ঘরে মা মনসার পুজোর প্রচলন হয়।

    যেহেতু চাঁদ সওদাগর মহাদেবের ভক্ত ছিলেন, তাই ডান হাতে দেবীর পুজো না করে পদ্মাবতী দেবীর পুজো তিনি বাঁ হাতে করেছিলেন। লোকশ্রুতি অনুযায়ী, সেই তখন থেকেই কান্দির পার্বতীপুর এলাকায় কানা ময়ূরাক্ষী নদীর পাশে তেঁতুলতলায় গাছের নীচে আজও মা মনসার পুজো হয়ে আসছে। বর্তমানে এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে কান্দির জেমো রাজ পরিবার। আজও ভক্তরা দূরদূরান্ত থেকে নিজেদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার জন্য বিশ্বাসের টানে ছুটে আসেন এই মন্দিরে। প্রতি বছর জৈষ্ঠ্য মাসে এখানে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ উৎসব। পাশাপাশি বসে মেলা। ১৫ দিন ধরে চলা মেলায় দেশ এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে গমগম করে মন্দির চত্বর। 

    মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মলয় চক্রবর্তী বলেন, “আমরাও নিজেদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি এই মন্দিরে চাঁদ সওদাগর প্রথম পুজো দিয়েছিলেন। তবে এই ঘটনার সত্যতা কারও জানা নেই। প্রাচীন এই মন্দিরে প্রতিদিন প্রচুর ভক্ত নিজেদের মনোবাঞ্ছা নিয়ে মায়ের পুজো দিতে আসেন। একসময় পুজোর বিশেষ দিনগুলোতে ৩০০ পশু বলি হত, এখন সংখ্যাটি পাঁচ-ছয়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। দেবীর উদ্দেশ্যে ফল প্রসাদ ছাড়াও বিশেষ পায়েস ভোগ নিবেদন করা হয়।“

    তিনি আরও বলেন, “বর্ষাকালে বন্যার সময় মন্দিরের বড় অংশ জলে ডুবে যায়। সেই সময় আমরা ভেলায় চেপে এসে দেবীর পুজো করি। ভক্তদের তখন মন্দিরে আসতে প্রচণ্ড অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।“

    মন্দিরে আগত পুণ্যার্থী অসীমা দাস বলেন, “অনেক বছর ধরেই এই মন্দিরে আসছি। মায়ের কাছে যে মনস্কামনা নিয়ে এসেছি মা কোনওদিন আমাদের ফিরিয়ে দেননি। তাই বিপদে আপদে সবসময় আমরা ছুটে আসি এই মন্দিরে।“
  • Link to this news (আজকাল)