এই সময়, বাগদা: বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হলো বাগদার এক পরিযায়ী শ্রমিক দম্পতিকে। ভারতে বসবাসের নথি দেখানোর পরেও তাঁদের পুশব্যাক করেছে বলে মহারাষ্ট্রের পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবার।
ছেলে এবং বৌমার জন্য দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে পরিবারের। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন–সহ বিধায়কের সঙ্গেও দেখা করেছেন পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার। বিষয়টি জানার পরেই তাঁদের সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বাগদার তৃণমূল বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর।
যে ভাবে বাংলাদেশি বলে এ রাজ্যের বাসিন্দাদের বাংলাদেশে সীমান্ত পার করে পুশব্যাক করা হচ্ছে তাতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, ‘যাদের আধার কার্ড রয়েছে, প্যান কার্ড রয়েছে তাঁরা বাংলা ভাষায় কথা বলে স্রেফ এই কারণে পুশব্যাক করা হয়েছে। আমরা এর ধিক্কার জানাই।’
বাগদা ব্লকের রনঘাট পঞ্চায়েতের হরিহরপুর গ্রামে বাড়ি ফজল মণ্ডলের। এক বছর আগে তিনি কর্নাটকে কাজ করতে গিয়েছিলেন।সঙ্গে তাঁর স্ত্রী তসলিমা মণ্ডলও ছিলেন। সেখান থেকে মাস পাঁচেক আগে মহারাষ্ট্রে এসেছিলেন কাজ করতে।
স্ত্রীকে নিয়ে মহারাষ্ট্রের নয়ানগর থানা এলাকাতেই কাজ করছিলেন ফজল। দিন কয়েক আগে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ধরপাকড় শুরু করে মহারাষ্ট্রের নয়ানগর থানার পুলিশ।
সে সময়ে ফজল এবং তসলিমা বাংলা ভাষাতেই কথা বলছিলেন। এর ফলেই বাংলাদেশি সন্দেহে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে তাঁদেরও গত ১০ জুন পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
ওই দম্পতি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক। এ দেশে বসবাসের কিছু নথিও দেখান। পরে নয়ানগর থানার পুলিশ ফজলের পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তাঁদের পরিচয়পত্র থানায় পাঠাতে বলা হয়।
সেই অনুযায়ী ফজলের ছোটবেলার পোলিও খাওয়ার সরকারি কাগজ থেকে আধার, ভোটার কার্ড ও জন্মের শংসাপত্র পাঠিয়েছেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু তার পরেও অনুপ্রবেশের অভিযোগে বাংলাদেশিদের সঙ্গে ওই দম্পতিকে পুশব্যাক করে বাংলাদেশে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ এবং বিএসএফের কাছে এ দেশে বসবাসের তথ্য দেখানোর পরেও ওই দম্পতি কোনও সুরাহা পাননি।
গত ১৪ জুন বর্ডার গার্ড অফ বাংলাদেশের কাছ থেকে বাগদার হরিহরপুর গ্রামে ফজলের পরিবারের কাছে ফোন আসে। তাঁদের জানানো হয়, কয়েকজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে তাঁদের ছেলে এবং বৌমাকে পুশব্যাক করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
এই খবর পাওয়ার পরেই দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে ফজলের বাবা-মায়ের। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওযার পরেও ছেলে-বৌমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার। সুরাহার জন্য ফজলের বাবা কথা বলেন বাগদার তৃণমূল বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুরের সঙ্গে।
ফজলের বাবা তাহাজুল মণ্ডল বলেন, ‘পুলিশের নির্দেশ মতো এ দেশে বসবাসের সমস্ত নথি পাঠানো হয়েছে। ছেলের জন্মের পর পালস পোলিও খাওয়ার সরকারি কাগজও পাঠানো হয়েছে। নথি পাঠানোর পরেও মহারাষ্ট্রের পুলিশ ছেলে-বৌমাকে পুশব্যাক করার খবরও জানায়নি। গত শনিবার সকালে বাংলাদেশের দিনাজপুর থেকে বিজিবির ফোন আসে। তখনই আমরা জানতে পারি।’
বাগদার বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর বলেন, ‘ফজল এবং তাঁর স্ত্রী এ রাজ্যের বাসিন্দা। তাঁরা বাংলায় কথা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। তার জন্য অনুপ্রবেশের সন্দেহে তাঁদের পুশব্যাক করে বাংলাদেশে পাঠানোটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। আমি বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও জানাব।’