নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: বছর দেড়েক আগে বিয়ে। তারপর থেকেই লেগে থাকত সাংসারিক কলহ। অভিযোগ, প্রায়দিনই চলত শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ। শেষ পর্যন্ত পিছমোড়া করে বেঁধে মারধর, মাথায় আঘাত করে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা বধূকে নৃশংসভাবে খুন। মৃত বধূর নাম সারজেনা খাতুন (২১)। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে রায়গঞ্জের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিপ্রডাঙি এলাকায়। গ্রামবাসীদের দাবি, সানফরাজ আলি নামে বাংলাদেশি এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় সারজেনার। ওই সানফরাজ তার স্ত্রীকে খুন করে পালিয়ে গিয়েছে। ঘটনার পর বিপ্রডাঙি গ্রামে বধূর ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে অভিযুক্ত সানফরাজের আধার কার্ড। একজন বাংলাদেশি নাগরিক কীভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে আধার তৈরি করে ওই এলাকায় বিয়ে এবং বসবাস করল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এবিষয়ে রায়গঞ্জ থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকারের বক্তব্য, পুলিস একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। মৃত্যুর পিছনে যাবতীয় কারণ খতিয়ে দেখতে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। অভিযুক্ত স্বামীরও খোঁজ চলছে। ঘটনার পর ওঠা বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছে পুলিস।
এ ব্যাপারে বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মিঠুন দেবশর্মার উদ্বেগ, অভিযুক্ত সম্ভবত বাংলাদেশি। তার ভোটার কার্ড থাকলে আমরা বিষয়টি টের পেতাম। পঞ্চায়েত সদস্যর সন্দেহ, জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে ওই যুবক। পুলিস বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখুক। স্থানীয় সূত্রে খবর, দেড়বছর আগে বিপ্রডাঙির বাসিন্দা সারজেনার সঙ্গে সম্পর্ক হয় সানফরাজের। রায়গঞ্জের সরিয়াবাদে সানফরাজের আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে। সেখান থেকেই বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। সারজেনার বাবা মারা গিয়েছেন। মা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। বিয়ের পর থেকে বিপ্রডাঙির বাড়িতেই বসবাস করত দম্পতিটি। মৃতার আত্মীয়রা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সার জন্য সানফরাজ তার স্ত্রীকে মারধর করত। এরই মধ্যে সোমবার সকালে সারজেনার মা তাঁর মেয়ের কোনও খোঁজখবর পাচ্ছিলেন না। প্রতিবেশী, আত্মীয়ের বাড়িতে বিষয়টি ভিনরাজ্য থেকে ফোন করে জানান তিনি। এরপরই গ্রামবাসীদের কয়েকজন ওই বাড়ির দরজার তালা ভেঙে পিছমোড়া অবস্থায় সারজেনার রক্তাক্ত দেহ ঘরে পড়ে থাকতে দেখেন।
খবর পেয়ে রায়গঞ্জ থানার পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মৃতের প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের দাবি, অভিযুক্ত সানফরাজ বাংলাদেশের বাসিন্দা। এখানে দিনমজুরের কাজ করত।
মৃতার আত্মীয় আসমা খাতুন, ঝালুয়া শেখদের অভিযোগ, সারজেনার স্বামী নেশা করে এসে বাড়িতে অযথা অশান্তি করত। মারধর করত। সারজেনা আটমাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। এই অবস্থায় সারজেনাকে নৃশংসভাবে খুন করল তার স্বামী।
আসমা খাতুন বলেন, সানফরাজ আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা। ওই দেশের বিভিন্নজনের সঙ্গে ওর যোগ রয়েছে। জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে। আমরা ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।