দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা বন্দরে ভিড়তে শুরু করেছে একের পর এক মাছভর্তি ট্রলার। এর ফলে খুব তাড়াতাড়ি বাজারে আসতে চলেছে বাঙালির প্রিয় ইলিশ। গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে আসা মৎস্যজীবীদের ট্রলারগুলিতে রয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টন ইলিশ, যার একেকটির ওজন ৭০০-৮০০ গ্রাম থেকে প্রায় এক কেজি পর্যন্ত। বেশ কিছুদিন অপেক্ষার পর এবার মোটা ইলিশে ভরে উঠেছে জাল। সাধারণত, জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইলিশ মাছ ধরা শুরু হয়। এই সময়েই বাজারে মরশুমের প্রথম ইলিশ আসে। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
মৎস্যজীবীরা জানান, আবহাওয়া ও সাগরের পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী দিনেও আরও বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাতে বাজারেও ইলিশের জোগান স্বাভাবিক হবে। এর ফলে দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ১৪ তারিখ মধ্যরাতে যে ট্রলারগুলো বেরিয়েছিল, তারা মাত্র একদিনেই এক থেকে দু’টন ইলিশ পেয়েছে। যে ট্রলার ফিরেছে, তাতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টন ইলিশ আছে।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ৬০০-৭০০ গ্রামের মাছই বেশি এসেছে। পাইকারি বাজারে এর দাম হবে মোটামুটি ৭০০ টাকা, ওজন যত বাড়বে দামও বাড়তে থাকবে। ৮০০ গ্রাম থেকে প্রায় এক কেজি পর্যন্ত ওজনের মাছের দাম ১০০০ টাকার কাছাকাছি হবে। আবহাওয়া এমনই অনুকূলে থাকলে আগামী কয়েকদিনই ইলিশ নিয়ে আরও ট্রলার ভিড়বে কাকদ্বীপ, রায়দিঘি, নামখানা, ডায়মন্ড হারবারের ঘাটে ঘাটে।
এক মৎস্যজীবী বলেন, ‘যদি এমন আবহাওয়া বজায় থাকে, তা হলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বাজার আরও ইলিশে ভরে উঠবে।’ কাকদ্বীপ ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘এই মরসুমের শুরুতেই যে পরিমাণ ইলিশ এসেছে, তাতে আমরা আশাবাদী। আবহাওয়া এখন অনুকূল রয়েছে। আরও ভালো পরিমাণে মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, ডিম পাড়তে সমুদ্র থেকে ইলিশের ঝাঁক এখন মোহনার কাছাকাছিই রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছ। সেই কারণে সমুদ্রের গভীরে না গিয়েই মোহনা থেকে স্বল্প দূরত্বেই জালবন্দি হচ্ছে বড় ইলিশ। প্রসঙ্গত, প্রত্যেক বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন ইলিশের প্রজননের সময় সরকারি নির্দেশে ৬১ দিন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক, ডায়মন্ডহারবার) সুরজিৎ কুমার বাগ বলেন, ‘লোভের বশবর্তী না হয়ে মৎস্যজীবীরা যদি ইলিশের প্রজননকাল এই দু’মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে মাছ ধরতে না যান, তা হলে তাঁদেরই লাভ। সবচেয়ে বড় কথা, এর ফলে আগামী দিনে বড়সড় সুস্বাদু ইলিশের আগের মত ফের দেখা মিলবেই। তাই নির্দিষ্ট সময়কালে মাছ ধরায় নিষেধ আইনের পাশাপাশি সচেতন হতে হবে মৎস্যজীবীদেরও।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছর বহু মৎস্যজীবীদের ট্রলারে ইসরোর তৈরি প্রযুক্তি ট্রান্সপন্ডার বসানো হয়েছে। গভীর সমুদ্রে কোনও রকম বিপদ হলে সঙ্কেত পাঠানো যাবে উপকূলে। এর ফলে মৎস্যজীবীদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার।