ফোরেক্সে লগ্নির ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত শহরের বাসিন্দা, সাড়ে ৭২ লক্ষ টাকা গায়েব
প্রতিদিন | ১৭ জুন ২০২৫
অর্ণব আইচ: সোশাল মিডিয়ার বান্ধবীর পরামর্শেই বিপত্তি। বৈদেশিক বিনিময় বা ফোরেক্সে লগ্নি করলে আসবে বিপুল টাকা। ভারতীয় টাকায় লগ্নি করলে হাতে আসবে ডলার। সেই ফাঁদে পা দিয়ে প্রথমে টাকা লগ্নি করে লাভের মুখে দেখেছিলেন উত্তর কলকাতার বাসিন্দা। তার পর ধাপে ধাপে লগ্নি করতে শুরু করেন তিনি। আর এভাবেই তাঁর সাড়ে ৭২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সাইবার জালিয়াত। শেষ পর্যন্ত জানতে পারেন, যে ফোরেক্স সংস্থায় লগ্নি করছিলেন, সেই সংস্থার কোনও অস্তিত্ব নেই। টাকা খুইয়ে ওই ব্যক্তি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এই পদ্ধতিতেই রাজ্য-সহ সারা দেশজুড়ে জালিয়াতির জাল বিছিয়েছিল শৈলেশ পাণ্ডে ও তার চক্র। ওই চক্রের মাথাদের প্রথম গ্রেপ্তার করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। পরে এই মামলার তদন্ত শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি ইডি বাজেয়াপ্ত করে। এবার নতুন করে একই ধরনের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। নতুন কোনও চক্র জালিয়াতি শুরু করেছে কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তির সঙ্গে গত এপ্রিল মাসে সোশাল মিডিয়ায় এক মহিলার পরিচয় হয়। ওই মহিলার সঙ্গে বিভিন্ন সময় তিনি চ্যাট করতেন। দ্বারিকা ওরফে বৈষ্ণবী নামে ওই মহিলা তাঁকে নিজের একটি মোবাইল নম্বরও পাঠায়। এর পর থেকে হোয়াটসঅ্যাপেও তাঁদের মধ্যে কথা হত। ওই মহিলা তাঁকে চ্যাট করার সময়ই ফোরেক্সে লগ্নি নিয়ে বোঝায়। ফোরেক্সে লগ্নি করলে বিপুল টাকা ফেরত পাওয়া যাবে বলে জানায়। তাঁকে টেলিগ্রাম অ্যাপে একটি গ্রুপেও যোগ করানো হয়। শেষ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি ফাঁদে পা দেন। একটি বিশেষ ফোরেক্স প্ল্যাটফর্মে ৫০ হাজার টাকা লগ্নি করেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি লাভের মুখ দেখেন। এর পর আরও ন’বার তিনি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করেন। এর মধ্যে তিন বার দশ লাখ টাকা করেও তাঁর বান্ধবীর দেওয়া ফোরেক্সের অ্যাকাউন্টে পাঠান। এভাবে দশ দফায় তিনি তাঁর কলেজ স্ট্রিট শাখার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৭২ লাখ ৪০ হাজার টাকা কয়েকটি অ্যাকাউন্টে পাঠান।
সম্প্রতি তাঁর দশ হাজার ডলার তোলার প্রয়োজন হয়। তিনি ওই ফোরেক্স সংস্থায় যোগাযোগ করলে তাঁকে বলা হয়, ওই ডলার তোলার জন্য ‘লাভ-কর’ হিসাবে তাঁকে আরও ৩৭ লাখ টাকা দিতে হবে। এতে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি সন্ধান করে জানতে পারেন যে, ওই ফোরেক্স প্ল্যাটফর্মটি ভুয়ো। তিনি আর কোনও টাকাই ফেরত পাবেন না। সাড়ে ৭২ লাখ টাকা খুইয়ে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের মতে, সোশাল মিডিয়ার ওই বান্ধবী দ্বারিকা বা বৈষ্ণবীও ভুয়ো। জালিয়াত চক্রই ফাঁদ পাতার জন্য বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় এই ধরনের ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করছে। ওই সোশাল মিডিয়া ও ওই ‘বান্ধবী’র মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে সাইবার জালিয়াত চক্রটির সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।