এই সময়: ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট), সেন্ট্রাল সেলস ট্যাক্স এবং এনট্রি ট্যাক্স নিয়ে বিবাদের জেরে ৮-৯ হাজার কোটি টাকা রাজ্যের কোষাগারে না এসে বকেয়া পড়ে রয়েছে। বিপুল সংখ্যক করদাতার সঙ্গে বছরের পর বছর এই বিবাদ চলতে থাকায় মামলা চালাতে রাজ্য সরকারের অর্থ খরচ হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বিধানসভায় বৃহস্পতিবার ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলস ট্যাক্স (সেটলমেন্ট অব ডিসপিউট) অ্যামেন্ডমেন্ট বিল-২০২৫’ পাশ হওয়ায় এই টাকার একাংশ রাজ্যের কোষাগারে ফিরবে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
এই ওয়ান টাইম সেটলমেন্টের সুযোগ নিয়ে যাতে বিবাদমান করদাতারা আগ্রহী হন সে কারণে এই সংশোধনী বিলে বকেয়া করের উপর থেকে সুদ, জরিমানা মকুব করার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
মোট বকেয়া করের ৭৫ শতাংশ দিলেই বিবাদ মিটিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন করদাতারা। করদাতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বিবাদের জেরে ৫৪৬৯ কোটি টাকার বেশি ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স, ১০৪০ কোটি টাকার বেশি এন্ট্রি ট্যাক্স এবং ৯৬৬ কোটি টাকার বেশি সেন্ট্রাল সেলস ট্যাক্স অনাদায়ী রয়েছে।
তবে এই মুহূর্তে ঠিক কত ডিসপিউট রয়েছে তা চন্দ্রিমা বৃহস্পতিবার স্পষ্ট না করলেও বিলের উপরে তাঁর জবাবি ভাষণে এই সংখ্যার কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছে। চন্দ্রিমার কথায়, ‘২০২৩ সালে এ ভাবে ট্যাক্স ডিসপিউট মেটানোর জন্য আইনে সংশোধনী আনা হয়েছিল।
সে সময়ে ২০ হাজার কেস ছিল। বকেয়া করের ৫০ শতাংশ দিলেই সেটলমেন্টের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ওই ২০ হাজার কেস থেকে রাজ্যের কোষাগারে ৯০৭ কোটি টাকা এসেছিল।’
অনাদায়ী এই ৮-৯ হাজার কোটি টাকার যদি অর্ধেকও রাজ্যের কোষাগারে আসে, তা হলে নবান্নর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে তা কাজে লাগবে মনে সরকারপক্ষ মনে করছে।
একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা থেকে গ্রামীণ রাস্তার মতো একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ গত কয়েক বছর বন্ধ রয়েছে বলে রাজ্য সরকারের অভিযোগ। এই অর্থ সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার আগে থেকে বরাদ্দের অঙ্ক ক্রমেই কমছে বলে রাজ্যের অর্থ দপ্তরের বক্তব্য।
চন্দ্রিমার কথায়, ‘২০১৫-১৬ সালে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে ১৪,৮৭৭ কোটি টাকা এসেছিল। কিন্তু ২০২৪-২৫ সালে এই অঙ্ক ৮৪১৪ কোটিতে নেমে এসেছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্য ১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকায় পায়।’
নবান্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রাপ্য অর্থ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করলেও চন্দ্রিমার দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে জিএসটি সংগ্রহের বৃদ্ধির হার জাতীয় হারের থেকে বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সারা দেশে জিএসটি সংগ্রহের গ্রোথ রেট ছিল ৯.৪৪ শতাংশ। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে জিএসটি সংগ্রহের গ্রোথ রেট ১১ শতাংশ। চন্দ্রিমার কথায়, ‘রাজ্যের মেশিনারি দিয়ে আমরা এই এসজিএসটি সংগ্রহ করতে পেরেছি। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে সারা দেশে জিএসটি সংগ্রহের গ্রোথ রেট ছিল ৭.৩ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের এসজিএসটি সংগ্রহের গ্রোথ রেট ছিল ৮.৮ শতাংশ।’