• মেট্রোকে জমি দেবে না রাজ্য, প্রশ্ন খিদিরপুর স্টেশন নিয়ে
    এই সময় | ২১ জুন ২০২৫
  • এই সময়: কলকাতা মেট্রোর পার্পল লাইনের খিদিরপুর স্টেশন তৈরির জন্য আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে জমি দিতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। রেলের পক্ষ থেকে পার্পল লাইন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডকে (আরভিএনএল) এমন বার্তাই দেওয়া হয়েছে।

    বিষয়টা নিয়ে যাতে কোনও ধোঁয়াশা না থাকে, তার জন্য নির্মাণকারী সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, খিদিরপুর স্টেশন বাদ দিয়েই যেন এই লাইনের নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

    জোকা থেকে বিবাদীবাগ—মেট্রোর পার্পল লাইনের ১৪.১ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশের মধ্যে প্রায় সাত কিলোমিটার অংশে ইতিমধ্যেই যাত্রী পরিবহণ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা ছিল এই লাইনের মোমিনপুর স্টেশন পর্যন্ত অংশটি এলিভেটেড এবং তার পর খিদিরপুর থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত অংশ ভূগর্ভস্থ করা হবে।

    তবে, প্রথম থেকেই খিদিরপুর স্টেশন নির্মাণে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ব্যস্ত ডায়মন্ড হারবার রোডের কোনও জায়গায় এই স্টেশন তৈরি হবে, সে বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে বেছে নেওয়া হয় আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের চৌহদ্দির কিছুটা অংশকে।

    যদিও এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের শুরু থেকেই টালবাহানা চলছিল। এ বার জমি না দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হলো।

    সম্প্রতি রাজ্য সরকারের সঙ্গে রেলের প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপ–এর (পিএমজি) বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের কোনও জমিই খিদিরপুর স্টেশন তৈরির জন্য না দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে।

    জানা গিয়েছে, উচ্চপর্যায়ের ওই বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং অন্য পদস্থ কর্তারা ছিলেন। মেট্রো জানাচ্ছে, খিদিরপুর মেট্রো স্টেশনটি তৈরির জন্য বডিগার্ড লাইন্সে ৮৩৭ বর্গমিটার জমির প্রয়োজন ছিল।

    রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা সরাসরি জমি হস্তান্তরে অস্বীকার করায় হতাশ কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডি। তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকারের এই বার্তা থেকেই স্পষ্ট যে, তারা খিদিরপুরে মেট্রো স্টেশন চায় না।

    আমাদের হিসেব ছিল, খিদিরপুরে মেট্রো স্টেশন তৈরি হলে প্রতিদিন গড়ে ৪৪ হাজার যাত্রী এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করতেন।’ মেট্রোর জিএম এই সিদ্ধান্তকে ‘শহরের ক্ষতি’ বলেই মনে করেছেন।

    যদি শেষ পর্যন্ত খিদিরপুর মেট্রো স্টেশন তৈরি না করা যায়, সে ক্ষেত্রে কী হতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবে আরভিএনএল–এর প্রযুক্তিবিদরা জানিয়েছেন, মোমিনপুর স্টেশন থেকে খিদিরপুরের দূরত্ব প্রায় ১.৬ কিলোমিটার।

    খিদিরপুর থেকে ভিক্টোরিয়া স্টেশনের দূরত্ব প্রায় দু’কিলোমিটার। যদি খিদিরপুরে শেষ পর্যন্ত কোনও মেট্রো স্টেশন তৈরি না করা যায়, তা হলে মোমিনপুর থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত অংশে কোনও মেট্রো স্টেশন তৈরি হবে না। কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির (সিআরএস) নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে নিয়ম রয়েছে, তাতে দু’টি মেট্রো স্টেশনের মধ্যে এতটা দূরত্ব রাখা যায় না।

    আরভিএনএল–এর ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, রেসকোর্সের গা ঘেঁষে একটি স্টেশন তৈরি করে পরিস্থিতি ‘ম্যানেজ করা’ যেতে পারে। তবে সেই কাজটিও সহজ হবে না। কারণ, রেসকোর্স ভিভিআইপিদের হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য ব্যবহার হয়।

    তাই সেখানে কোনও নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পড়ে থাকে আর একটি মাত্র পথ — মোমিনপুর ও ভিক্টোরিয়া স্টেশনের মধ্যে কোনও জায়গায় একই সঙ্গে সুড়ঙ্গে হাওয়া ঢোকার জন্য একটি ভেন্টিলেশন শাফট এবং যাত্রীদের জরুরি অবস্থায় বাইরে বের করে আনার জন্য একটি ইভ্যাকুয়েশন শাফট তৈরি করা। না হলে পার্পল লাইন জোকা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা দেওয়া যাবে না।

  • Link to this news (এই সময়)