• রাজস্বের অর্ধেক কলকাতা পুরসভাকে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার! শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে নয়া বিজ্ঞাপন নীতি
    আনন্দবাজার | ২২ জুন ২০২৫
  • প্রায় সাড়ে তিন বছর যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর অবশেষে নতুন বিজ্ঞাপন নীতি আনতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভা সূত্রে খবর, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ কিংবা আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই এই নীতি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হবে। সেই নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, শহরে কেন্দ্রীয় সরকারের জায়গায় লাগানো বিজ্ঞাপনগুলির আয় থেকে কলকাতা পুরসভাকে ৫০ শতাংশ ভাগ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রক বা সংস্থাকে।

    কলকাতা শহরে রেল, মেট্রো রেল, জাহাজ পরিবহণ মন্ত্রক-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার জায়গা রয়েছে। এতদিন এই বিজ্ঞাপনগুলি থেকে প্রাপ্ত বিপুল অর্থ শুধুমাত্র ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার ঘরেই ঢুকত। এ বার সেই ছবি বদলাতে চলেছে। নতুন বিজ্ঞাপন নীতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ওই সমস্ত সংস্থাকে পুরসভার সঙ্গে বিজ্ঞাপনের আয়ের অর্ধেক ভাগ করে নিতে হবে।

    শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর, সংস্থা এবং পর্ষদের ক্ষেত্রেও নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তারা আর নিজেদের মতো করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। শহরের মধ্যে কোনও বিজ্ঞাপন দিতে হলে পুরসভার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। যে সমস্ত হোর্ডিং এখনও পর্যন্ত পুরসভার আওতার বাইরে রয়েছে, সেগুলির কাঠামোও পুরসভার হাতে তুলে দিতে হবে। নতুন নীতির আরও একটি বড় দিক হল, শহরের সমস্ত বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং এ বার থেকে পুরসভার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ ছাড়া ধীরে ধীরে স্ট্রিট হোর্ডিংগুলিকে ‘মনোপলি’ ভিত্তিতে পরিচালনা করা হবে। সেই ‘মনোপলি’র কাঠামো কেমন হবে, সেটাও নির্ধারণ করবে পুরসভা। কিছু ‘মনোপলি’ ডিজিটাল হবে। সব মিলিয়ে শহরকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার লক্ষ্যেই এই রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।

    ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নতুন নীতিতে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বিজ্ঞাপনের দিকেও নজর দিচ্ছে পুরসভা। পুনর্নবীকরণযোগ্য উপাদান দিয়ে যদি কেউ হোর্ডিং বা ব্যানার তৈরি করে, তবে সেখানে মিলবে বিশেষ ছাড়। নতুন নীতিতে পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। শহরের কোনও ব্রিজ, উড়ালপুল বা ফুট ওভারব্রিজের বিমে বিজ্ঞাপন লাগানো যাবে না। সেই সমস্ত জায়গা শুধুমাত্র সবুজায়নের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এ ছাড়া শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাকে পুরোপুরি বেসরকারি বিজ্ঞাপন মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

    সরকারি হোর্ডিংয়ের সংখ্যাও কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। সেই সঙ্গে কোনও ল্যাম্পপোস্ট, সিগন্যাল পোস্টে আর বিজ্ঞাপন লাগানো যাবে না। অর্থাৎ শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধি এবং নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা পরিচালনার দিকেই এ বার জোর দিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। এই নতুন বিজ্ঞাপন নীতি কার্যকর হলে শহরের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো যেমন মজবুত হবে, তেমনই বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার উপর পুরসভার নিয়ন্ত্রণও সুদৃঢ় হবে বলেই মনে করছেন পুর আধিকারিকেরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)