• প্রাণ বাঁচাতে নথি আর ওষুধ নিয়ে দৌড়! ২৪ ঘণ্টা পরও আগুন আতঙ্ক তাড়া করছে বারাসতবাসীদের
    প্রতিদিন | ২৩ জুন ২০২৫
  • অর্ণব দাস, বারাসত: যেভাবেই হোক প্রাণে বাঁচতে হবে! চোখের সামনে লেলিহান শিখা দেখে একথা ভেবে মহিলা, বয়স্ক এবং বাচ্চারা ভোটার, আধার, প্যান আর ওষুধ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল বাড়ি থেকে। আর বাড়ির কর্তা, পুরুষদের কাজ ছিল যেভাবেই হোক বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার পার্শ্ববর্তী কোন জলে ফেলা। শনিবার রাতের সেই ভয়াবহ স্মৃতি মনে করলেই এথনও আতঙ্কে কেঁপে উঠছেন বারাসত শহর সংলগ্ন কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের বামনমুড়োর বাসিন্দারা। এই এলাকার ১০-১২টি পরিবারের কমবেশি ৬০ জনের এখন অস্থায়ী আশ্রয়স্থল ঘটনাস্থল লাগোয়া একটি নির্মীয়মান ব্যাংকোয়েট। কিন্তু কারও মন টিকছে না সেখানে। বারবারই তাঁরা বেরিয়ে পড়ছেন, দেখে আসছেন ভিটের অবস্থা। আর ভাবছেন, কবে নিজের ঘরে ফিরে খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন। কারণ, শনিবার রাত থেকে কেউ-ই দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। বারবার তাদের কানে বাজছে, একেরপর এক বিস্ফোরণ ও আর চোখে ভাসছে দাউ দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা ভয়াবহ আগুনের শিখা।

    শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছটা-পৌনে সাতটায় লাগা আগুন প্রথমে টেরই পায়নি সংলগ্ন এলাকার কেউ। অকুস্থলের প্রাচীর লাগোয়া বাড়িতেই থাকে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। তাঁদের বাড়িতে ভাড়াও আছে। নিচে দোকান। ঘটনার সন্ধ্যায় দোকানে ছিলেন দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন আনুমানিক পৌনে সাতটা বাজে। হঠাৎ আগুন আর বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পরপরই দেখেন তিনি দেখেন, পিছনের ঢালিপাড়ার কমবেশি ১৫টি পরিবার বামনমুড়ো রোড ধড়ে দৌড়ে টাকি রোডের দিকে যাচ্ছে। মহিলাদের কোলে বাচ্চা, পুরুষদের কাঁধে গ্যাস সিলিন্ডার। তখন দীপকরাও বাড়ি ফাঁকা করতে শুরু করেন। তাদের পার্শ্ববর্তী পাঁচ-ছটি বাড়িও থেকেও বাসিন্দারা বেরিয়ে পড়েন ও তার আধার প্যান কার্ড নিয়ে। গ্যাস সিলিন্ডার সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে না পেরে অনেকেই পুকুর, জলাশয়, নালায় ফেলে দেয়।

    দীপকের স্ত্রী সুনিতা বলেন, “আমাদের নিচতলায় তেমন ক্ষতি হয়নি পাঁচিল ছিল বলে। কিন্তু দোতলা তিনতলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে, তাপে এসি গলে গিয়েছে, জানলার কাজ ফেটে গিয়েছে, বাড়ির সব গাছপালা পুড়ে গিয়েছে। ভাগ্যিস আগুন সন্ধ্যায় লেগেছিল। রাতে ঘটনাটি ঘটলে সর্বনাশ হয়ে যেত। বসতি এলাকায় কারখানা, গোডাউন না থাকলেই ভালো হয় মনেই মনে করি। আমরা আপাতত বাড়িতে থাকলেও, বহু মানুষ পাড়ার নির্মীয়মান ব্যাংকোয়েটে রয়েছে।” ব্যাংকোয়েটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, “মালিক বলেছেন, যতদিন পরিস্থিতি ঠিক না হচ্ছে আমাদের এখানেই বাসিন্দারা থাকবেন। রবিবার রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা আমরাই করছি।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)