ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের প্রভাব ডুয়ার্সের চা শিল্পেও! আটকে ১৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থডক্স চায়ের রপ্তানি
প্রতিদিন | ২৪ জুন ২০২৫
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি : মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের ধাক্কায় বেসামাল পরিস্থিতি তরাই ও ডুয়ার্স-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চা শিল্পে। ইরান এবং সংলগ্ন উপসাগরীয় দেশগুলিতে ভারতীয় চা প্রায় এক তৃতীয়াংশ রপ্তানি হয়। সেখানে মূলত অর্থডক্স চা পাঠানো হয়। যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ইরান চা রপ্তানিতে স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে। ফলে আটকে গিয়েছে দেড়শো কোটি টাকারও বেশি দামের অর্থডক্স চা। তার উপর ইরানে মার্কিন হামলার পর হরমুজ প্রণালীর মতো শিপিংরুট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে চা শিল্পে অন্ধকার নেমেছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
ইন্ডিয়ান টি প্ল্যানটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সচিব রামঅবতার শর্মা বলেন, “মধ্য প্রাচ্যের যুদ্ধের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে তরাই, ডুয়ার্স সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চা শিল্পে। চা রপ্তানি বন্ধ হয়েছে। এখানকার অর্থডক্স চায়ের বিরাট বাজার রয়েছে ইরান ও সংলগ্ন দেশগুলোতে। সেখানে অর্থডক্স চা রপ্তানি বন্ধ হতে চায়ের দাম ক্রমশ নামছে।” চা বণিকসভাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপদের এখানেই শেষ নয়। ভারতের অর্থডক্স চা ইরান ছাড়াও আজারবাইজান, কাজাখস্তানে রপ্তানি হয়ে থাকে। প্রায় ২৬২ মিলিয়ন কেজি চা সেখানে যায়। বেশিরভাগ উৎপাদন হয় আসামে। এই সময় ফার্স্ট ফ্লাশের চায়ের রপ্তানি চলছিল।
জুলাই মাস থেকে বর্ষার চা উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু যুদ্ধের আবহে চা রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চা উৎপাদকরা বুঝতে পারছেন না পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে? যুদ্ধ কবে থামবে? ইতিমধ্যে চা নিলাম কেন্দ্রগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে চা সরবরাহকারী সংস্থা না থাকায় অর্থডক্স চায়ের চাহিদা ও দাম দুটোই কমছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেকেই অর্থডক্স চা উৎপাদন বন্ধ করে সিটিসি চা উৎপাদনে চলে গিয়েছেন। ফলে সিটিসি চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। দামও কমছে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “একা ইরান ২০ মিলিয়ন কেজির বেশি অর্থডক্স চা কিনে থাকে। সেখানে চা রপ্তানি বন্ধ হয়েছে। হরমুজ প্রণালীর মতো শিপিং রুট এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিমানবন্দরগুলো এখন যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবেই ইরান সংলগ্ন দেশগুলোতেও চা রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ না হলে উত্তরবঙ্গ এবং আসামের চা শিল্পের সর্বনাশ হবে।”
চা বণিকসভাগুলোর শঙ্কা, ঘুরপথে চা রপ্তানিতে সমস্যা আরও জটিল হবে। বিমান পরিবহন খরচ ইতিমধ্যে বেড়েছে। জাহাজ পরিবহন খরচও বাড়বে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘুরপথে ভারতের জাহাজ চলাচলের সময় অন্তত ২০ দিন বেশি এবং খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়বে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান সতীশ মিত্রুকা বলেন, “ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। অফিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে ইরানে চা রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। অথচ আসামে এখন সেরা মানের চা উৎপাদনের মরশুম চলছে। ওই চায়ের ভবিষ্যৎ কী কেউ জানে না।”