সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীদের ক্রমেই ‘সফ্ট টার্গেট’হয়ে উঠছে শিলিগুড়ি? কদিনের ব্যবধানে এটিএম লুট ও সোনার দোকনে ডাকাতির ঘটনায় এব্যাপারে নিশ্চিত পুলিস। স্বাভাবিক ভাবেই এটা তাদের মাথাব্যথার কারণ। পুলিস সূত্রে খবর, এটিএম লুট থেকে জুয়েলারি দোকানে ডাকাতি, দু’টি অপারেশনেই জড়িত ভিনরাজ্যের দাগী অপরাধীরা। অবশ্য দু’টি গ্যাংই ভিন্ন। প্রথমটির ক্ষেত্রে নুহ গ্যাং। আর সোনার দোকানে লুটপাটের পিছনে বিহার, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ-এই চাররাজ্যের দুষ্কৃতীদের যৌথ গ্যাং। তাই শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তায় আন্তঃরাজ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা চাঙ্গা করার দাবি উঠেছে।
কিন্তু কেন দুষ্কৃতীদের কাছে সফ্ট টার্গেট হয়ে উঠছে শিলিগুড়ি? সহজ উত্তর, এর ভৌগলিক অবস্থান। এই শহরের কাছেই প্রতিবেশী রাজ্য বিহার ও সিকিমের সীমানা। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ, নেপালও অদূরে। অপরাধ সংগঠিত করে এখান থেকে সহজে সড়ক ও রেলপথে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব। পুলিসের এক কর্তা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এই শহর ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীদের টার্গেট। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীদের মোকাবিলায় আন্তঃরাজ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
রবিবার দুপুরে হিলকার্ট রোডে একটি জুয়েলারি দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিস চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওই গ্যাংকে বিহারের বলে অনুমান করা হচ্ছিল। কিন্তু পরে জানা গিয়েছে,শুধু বিহার নয়, আরও তিন রাজ্যের দুষ্কৃতীরা যৌথভাবে ওই গ্যাং গড়ে। বিভিন্ন অপরাধে জেলে গিয়ে তাদের পরিচয় হয়। ইতিমধ্যে ডাকাতিতে জড়িত বিহার ও রাজস্থানের দু’জনকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিস কমিশনার(পূর্ব) রাকেশ সিং বলেন, ঘটনার তদন্তে কিছু তথ্য মিলেছে। সেসব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার চারদিন আগে চম্পাসারির এটিএম থেকে ১০লক্ষ ৫৪হাজার টাকা লুট হয়। ওই ঘটনায় এখনও পুলিস কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিসের অনুমান, ওই ঘটনার সঙ্গে হরিয়ানার নুহ গ্যাং জড়িত। এরা মূলত এটিএম লুট ও সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে। বিভিন্ন এলাকার ট্রাক টার্মিনাস, ধাবা,লাইন হোটেলে আস্তানা তৈরি করে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট গ্যাংয়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করে পুলিসের একটি দল হরিয়ানা গিয়েছে। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিস কমিশনার(পশ্চিম) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র এই দু’টি ঘটনা নয়। মেট্রোপলিটন এই শহর ও আশেপাশের এলাকায় মাদক কারবার, কলসেন্টার খুলে অনলাইন প্রতারণা চক্র, সোনাপাচার প্রভৃতিতেও মিলছে ভিনরাজ্য ও বিদেশি দুষ্কৃতীদের সংস্রব। যা পুলিসের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ। পুলিস সূত্রে খবর, ভিনরাজ্যের অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়লেও সেভাবে প্রতিটি থানা ও ফাঁড়ির পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ। পেট্রোলিং ভ্যানগুলিও পুরনো। শহরের বহু সিসিক্যামেরা অকেজো। গোয়েন্দা বিভাগও যে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, মুখে স্বীকার না করলেও ভেতরে ভেতরে তা মানছেন পুলিসের কর্তারাও। নজরদারি ও তল্লাশিতে আধুনিক ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পুলিস অফিসাররা অবশ্য বলেন, শহরে পুলিস সতর্ক রয়েছে। তাই সাইবার ক্রাইম সহ বেশকিছু বড় ঘটনা এই পুলিসই কিনারা করেছে।