এই সময়, তমলুক: পুরী ও মাহেশের পরেই মহিষাদলের রথের বেশ নামডাক রয়েছে। ২৪৯ বছর ধরে রথ উৎসব পালন করে চলেছে মহিষাদল। এই রথযাত্রার প্রধান আকর্ষণ হলো রাজবাড়ির কুলদেবতা গোপালজিউ।
জগন্নাথের সঙ্গে পূজিত হন রাজপরিবারের গোপালজিউ। এখানে স্নানযাত্রার প্রচলন নেই। তার পরিবর্তে রথযাত্রার আগের দিন আয়োজিত হয় নেত্র উৎসব। এই উৎসবে রথের রশি বাঁধা হয়। এরপরেই রথযাত্রার সূচনা হয়।
২৭ জুন রথযাত্রা। তার আগের দিন অর্থাৎ ২৬ জুন নেত্র উৎসবের মধ্যে দিয়ে রথযাত্রার সূচনা হবে। এ বছর রথের ছয়টি নতুন চাকা ও একটি নতুন সারথি তৈরি হচ্ছে। ১৭৭৬ সালে রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের স্ত্রী রানি জানকি দেবীর হাত ধরে এই রথযাত্রার সূচনা হয়।
শুরুতে রথের ১৭টি চূড়া ছিল। কিন্তু এখন ১৩টি রয়েছে। রথের দিন রথটি মহিষাদল রাজবাড়ি থেকে ঘাগরা গ্রামে জগন্নাথের মাসির বাড়ি যায়। রথ টানার জন্য চারটি দড়ি রয়েছে। যার মধ্যে একটি শুধু মহিলাদের জন্য।
রাজ পরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ আজও প্রথা মেনে পালকিতে চড়ে রথের কাছে আসেন। রাজবাহাদুরের দেহরক্ষী ও রাজছত্রধারীও উপস্থিত থাকে। রাজা প্রথম রশিতে হাত দেন। এরপরেই গড়াতে শুরু করে রথের চাকা।
এই রথের আরও এক বৈশিষ্ট্য হলো কাদা খেলা। রথযাত্রা দিন যে রাস্তা দিয়ে রথ যাবে তা জল দিয়ে ভেজাতে হয়। সেই কাদায় গড়াগড়ি খান অনেকে। প্রবীণরা বলেন, ‘রথযাত্রার পরে এতটাই কাদা লেগে যেত যে, অনেককে চেনাই যেত না। রথ মানেই বর্ষা আর সেই কাদা মেখে আনন্দে মেতে ওঠা।’
রথ উপলক্ষে মহিষাদল শহিদ বেদি থেকে গুণ্ডিচাবাটি পর্যন্ত রাস্তার ধারে বসে বড় মেলা। কাঁঠাল, বেতের সামগ্রী, জিলিপি, তেলেভাজা, পাঁপড়–সহ নানা পসরা সাজিয়ে নিয়ে বসেন দোকানিরা।
মহিষাদল মাসির বাড়িতে সাত দিন ধরে চলে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাজবাড়ির ছোলাবাড়িতে রথমেলা চলে প্রায় এক মাস।
রথের নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যে বৈঠক করেছে রথ পরিচালনা কমিটি। থাকবে পুলিশ। চলবে সিসিটিভির নজরদারি। রথ কমিটির সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেন, ‘রথযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছি।’
তবে এই রথ মানুশের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে। তাই এলাকার মানুষের সঙ্গে বাইরে থেকেও বহু মানুষ মহিষাদলের রথ দেখতে আসেন।