এই সময়: অনেক কিছুর যেমন বর্ষপূর্তি হয়, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানেরও হয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের নয়, পরিকল্পনার। রাজ্যের মধ্যে ঘাটাল একমাত্র পুর এলাকা, যেখানে ফি বছর বন্যা হয়। জলবন্দি অবস্থায় দীর্ঘদিন কাটাতে হয় পুর এলাকার বাসিন্দাদের।
গ্রামাঞ্চলের অবস্থা দাঁড়ায় আরও সঙ্গীন। একবার নয়, এই দুর্ভোগ বছরে কয়েকবার পোহাতে হয় বৃহত্তর ঘাটালের বাসিন্দাদের। কেলেঘাই ও কপালেশ্বরী নদীঘেরা ঘাটালের মূল সমস্যা নিকাশির। সে জন্যই প্রয়োজন মাস্টার প্ল্যানের।
এই প্রকল্পে বাস্তবায়িত হলে বন্যা পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলবে। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদন করেও কেন্দ্র কানাকড়ি দেয়নি বলে অভিযোগ রাজ্যের। রাজ্য সরকার তাই নিজের অর্থেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। কাজ শেষ হতে দু’বছর সময় লাগবে।
প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে এই প্রকল্প নিয়ে চলছে টানাপড়েন। সেই বাম আমল থেকে রাজ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করে আসছে। বর্তমানে জলভাসি ঘাটালে ফের চর্চায় ফিরেছে মাস্টার প্ল্যান।
বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলের পাল্টা অভিযোগের মধ্যে রাজ্যের তরফে নতুন করে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রকল্প অনুমোদন, অর্থ মঞ্জুরির ছাড়পত্র দিয়েও ওই প্রকল্পে এক টাকাও দেয়নি বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার।
শেষ পর্যন্ত রাজ্য নিজেদের টাকাতেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। তার অন্যতম হলো কৃত্রিম নদীপথ তৈরি। তা শেষ হতে দু’বছর লাগবে।
রবিবার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেচ দপ্তর জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকারের জলশক্তি মন্ত্রকের অধীন গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনের (জিএফসিসি) কাছে কেন্দ্রীয় সহায়তা পাওয়ার জন্য ১২১২ কোটি টাকার একটি বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দেওয়া হয়।
২০১৪-২০২২ সময়কালে বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়নের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১২৩৮.৯৫ কোটি টাকার ছাড়পত্রও দেয়। এরপর ২০২২ সালে কেন্দ্র তাদের ‘বন্যা ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত এলাকা কর্মসূচি’ প্রকল্পের আওতায় এই প্রকল্পকে অন্তর্ভুক্তি করার কথা জানায়। তার পর থেকে আর কিছুই এগোয়নি বলেই অভিযোগ রাজ্যের সেচ দপ্তরের।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান যে দরকার, তা অর্ধ শতাব্দী আগেই উপলব্ধি করেছিল প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৩ সালে প্রকল্পের শিলান্যাস করেন রাজ্যের তৎকালীন সেচমন্ত্রী প্রভাস রায়। ব্যস ওইটুকুই— শুরু হতে না হতেই থমকে যায় কাজ। এক দশক পরে, ১৯৯৩ সালে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করেন এলাকার বাসিন্দারা।
তাতেও অবশ্য কাজের কাজ কিছু হয়নি। ২০০৯ সালে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। ডিটেলস প্রোজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি শুরু হয়। ২০১০ সালে গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনে ডিপিআর জমা পড়ে। পরের বছরই মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য চেয়ে ডিপিআর ফেরত পাঠায় কেন্দ্র। তার মধ্যেই রাজ্যে পালাবদল ঘটে।
অভিযোগ, গত ১১ বছরে বারেবারে তদ্বির সত্ত্বেও, আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য কোনও আর্থিক সাহায্য করেনি। কেন্দ্রের অসহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার ২০১৮-২০২১ সালে প্রকল্প এলাকায় সাতটি মজে যাওয়া নদীর ১১৫ কিলোমিটার ৩৪১.৪৯ কোটি টাকা খরচে খনন করে।
তার পরেও কেন্দ্র অর্থ না দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এই প্রকল্প রাজ্য সরকার নিজের অর্থেই করবে। মোট ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় ১৫০০ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কাজ শুরু হয়। আগামী দু’বছরের মধ্যে তা শেষ হবে বলে জানানো হয়েছে। এ বছরের বাজেটে প্রাথমিক ভাবে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি জল কপাটের (স্লুইস গেট) কাজ ৬০-৭০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে।