এই সময়: সোমবার বিকেলে নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ। বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে সবে যোগ দিয়েছেন তিনি।
ভারতের কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারের এটাই প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎকার বলে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের আড়ালে এখনও অনেক প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে রয়েছে।
এমন একটি সময়ে দিল্লিতে যোগ দেওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কুটনৈতিক মহল।
যদিও এই সাক্ষৎকার নিয়ে নবান্ন থেকে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। ২০১৬–তে শেষ বার বাংলাদেশের তৎকালীন হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর। তার পর থেকে এমন আলাপচারিতা এই প্রথম।
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মানবকল্যাণে দুই বঙ্গে ভূ ও জীব বৈচিত্র্য নিয়ে যৌথ সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব দেন। তাঁর মতে, ভারতের এই অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও জীববৈচিত্র্যে সাদৃশ্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃতিক পরিবেশগত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দুই দেশের জীবকূল। সমীক্ষার সাহায্যে যার সমাধানসূত্র মিলতে পারে।
পরে কলকাতায় বাংলাদেশের হাইকমিশন প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও অভিন্ন মূল্যবোধকেন্দ্রিক আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে, তা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উর্ধ্বে।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মমতা। এই সৌজন্য বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি হাইকমিশনারের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এই বৈঠকে কলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার মুহাম্মদ আশরাফুল শিকদার এবং রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক হয়।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। এ ছাড়াও উত্তরবঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত ‘চিকেন নেক’ এবং সুন্দরবন ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের অভিযোগ, মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলি এই পথগুলি ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই সে দেশের প্রশাসনের সঙ্গে এই চিকেন নেক পরিদর্শন করেছে বলেও ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, বাংলাদেশের হাইকমিশনার এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশের মিষ্টি, শাড়ি উপহার দেন। মুখ্যমন্ত্রীও তাঁদের হাতে উপহার তুলে দেন।
বৈঠকে বাংলাদেশে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারি বাড়ি ভাঙচুরের প্রসঙ্গ উঠে আসে। মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার জানান, এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত নয়। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা।