• ‘ক্ষমতা নেই, কিচ্ছু করতে পারবেন না’, SP-র চোখে চোখ রেখে বললেন তমন্নার মা
    এই সময় | ২৪ জুন ২০২৫
  • মেয়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে ফুঁসছেন মা। বুক ফাটা কান্নায় মিশেছে ক্রোধের আগুন। কোনও ভয় নেই আর, ভরসাও নেই কারও প্রতি! তাই কালীগঞ্জের সাবিনা ইয়াসমিন পুলিশ সুপারের মুখের উপর অনায়াসে বলে দিয়েছেন, ‘কোনও ক্ষমতা নেই আপনাদের। কিচ্ছু করতে পারবেন না।’ সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

    কালীগঞ্জ মীরা ফাঁড়ির পুলিশ আধিকারিকের চোখে চোখ রেখে হুঙ্কার দিয়েছেন সদ্য সন্তানহারা মা সাবিনা, ‘আপনাদের তো শেখানো হয়েছে, ঝামেলা লাগুক, শিশুর প্রাণ যাক। কিছুই করবে না। আপনার কাউকে জবাব দিতে হবে না। আপনি আমাকে জবাব দিন। আমার সন্তান ফেরত চাই।’

    সোমবার নদিয়ার কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়। তৃণমূলের জয়ের খবরে উৎসবের আবহ এলাকায়। হঠাৎই তাল কাটে। মায়ের সামনে বোমার আঘাতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীর মৃত্যু হয়। অভিযোগ ওঠে, তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয়। সেই বোমাই প্রাণ কাড়ে তমন্না খাতুনের। ছোট্ট মেয়ে মায়ের সঙ্গে স্নান করে ফিরছিল। সেই সময়েই এই বোমা মারা হয় বলে অভিযোগ।

    এই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় চারদিকে। তমন্নার মা সাবিনা ইয়াসমিন দাবি করেন, তিনি সিপিএমের ভোটার হওয়ায় পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হয়। তড়িঘড়ি ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চার জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

    তবে সোমবার থেকে দফায় দফায় সাবিনা জানিয়েছেন, পুলিশে আস্থা নেই তাঁর। সোমবারই বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কালীগঞ্জের মীরা ফাঁড়িতে যান তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে সাবিনা নাম ধরে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। এও বলেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের কী শাস্তি হবে? আদৌ শাস্তি হবে?

    অন্যদিকে নদিয়ার পুলিশ সুপার অমরনাথ কে নিহত তমন্নার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে, স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, পুলিশে তাঁর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই। এসপির আশ্বাসে আরও তীব্র হয় সাবিনার ক্ষোভ। মুখের উপর বলেন, ‘কোনও ক্ষমতা নেই আপনাদের। থাকলে মোলান্দি ঠান্ডা হয়ে যেত। তা হলে বাচ্চা নিয়ে আমাকে পালাতে হতো না। আমি বোনের বাড়ি চলে যেতাম। শুধু আমার মেয়ে ক্লিপ অর্ডার করেছিল অনলাইনে। সোমবারই আসার কথা ছিল। তাই থেকে যাই।’

    এমনকী সন্তানকে চোখের সামনে ছটফটিয়ে মরে যেতে দেখা মায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে পুলিশ সুপার যখন বলেন, ‘যারা এটা করেছে, নিশ্চিন্তে থাকুন আমরা গ্রেপ্তার করব।’ সপাটে সাবিনা বলে দেন, ‘কিচ্ছু করবেন না !’ দ্রুত সেই জায়গা ছাড়েন পুলিশ।

    এ বিষয়ে এসপি অমরনাথ কে বলেন, ‘ওঁর মানসিক পরিস্থিতি এখন ঠিক নেই। এ রকম বলাটাই স্বাভাবিক। পুলিশ প্রথম থেকে তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এরকম কথাবার্তা অনেক জায়গাতেই শুনতে হয়। আর সিবিআই তদন্ত চাওয়াটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত করেছে। বাকি অভিযুক্তরাও খুব শীঘ্রই গ্রেপ্তার হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)