• রাইফেল শুটারদের নামে জাল লাইসেন্সে বুলেট পাচার! চক্রের সন্ধানে গোয়েন্দারা
    প্রতিদিন | ২৪ জুন ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: রাইফেল শুটারদের নামে জাল লাইসেন্সেই কি কেল্লাফতে অস্ত্র পাচারকারীদের? গোয়েন্দা পুলিশের মতে, রাইফেল শুটাররা ব্যবহার করেন স্পোর্টস রাইফেল অথবা স্পোর্টস পিস্তল। আর স্পোর্টস রাইফেলের বুলেটই চোরাপথে এসে পৌঁছচ্ছে অস্ত্র পাচারকারীদের হাতে। রাইফেল শুটারদের ভুয়ো লাইসেন্স দেখিয়ে একসঙ্গে প্রচুর বুলেট তুলে পাচার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। অস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে এই বুলেট পাচার ও রাইফেল শুটারদের ভুয়ো লাইসেন্স তৈরির পিছনে বিহারের মুঙ্গেরের অস্ত্র পাচারকারীদের চক্র রয়েছে কি না, এবার সেই তথ্য খতিয়ে দেখছেন কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা।

    ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে ধরা পড়েছে বিপুল সংখ্যক বুলেট। এছাড়া বিভিন্ন জেলা ও কমিশনারেট এলাকা থেকেও প্রচুর অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। সম্প্রতি হলদিয়া থেকে কলকাতায় পাচার করার পথে উদ্ধার হয় ১২০টি দু’ধরনের বুলেট। গ্রেপ্তার হয় পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ মাঝি।তাকে জেরা করে চক্রের আরও কয়েকজনের সন্ধান পয় এসটিএফ। সেইমতো ময়দানে ফাঁদ পেতে এসটিএফের গোয়েন্দাদের হতে গ্রেপ্তার হয়েছে মঙ্গলকোটের শহিদুল্লার মল্লিক। তার ব্যাগের ভিতর থেকে দশটি ৭.৫৬ এমএম বুলেট উদ্ধার করে এসটিএফ। পরপর কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের এসটিএফের হাতে বুলেট উদ্ধারের পর এসবের উৎস নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

    গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণভাবে বছরে ৫০ থেকে ১০০টি করে বুলেট কিনতে পারেন লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র ব্যবহারকারীরা। কিন্তু প্রয়োজনে অনেক বেশি সংখ্যক বুলেট কিনতে পারেন রাইফেল শুটাররা। গোয়েন্দাদের সূত্র জানিয়েছে, সাধারণভাবে দুই ধরনের স্পোর্টস রাইফেলের বুলেটের চাহিদা বেশি। ৩১৫ বোর রাইফেলের জন্য ৮ এমএম বুলেট ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ৩২ বোর রাইফেলের জন্য ব্যবহার করা হয় ৭.৬৫ এমএম বুলেট। স্পোর্টস রাইফেল যে শুটাররা অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য অনেক বেশি বুলেট বরাদ্দ থাকে।

    পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, অনুশীলনের জন্য যে ৮ এমএম ও ৭.৬৫ এমএম বুলেট ব্যবহার করা হয়, তা সাধারণভাবে দেশের বাহিনীর কোনও অস্ত্রে ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু এই মাপের বুলেটকেই সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতীদের কাছে ‘জনপ্রিয়’ করে তুলেছে মুঙ্গেরের বেআইনি অস্ত্র কারখানার ‘মিস্ত্রি’রা। ওই মাপের বুলেট অনুযায়ীই ৭ এমএম ও ৮ এমএম ‘মুঙ্গেরি’ পিস্তল তৈরি হয়েছে। তা বিহার থেকে রেলপথ ও সড়কপথে পাচার হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে কলকাতা ও এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অস্ত্র পাচারের এজেন্টদের হাতে। অনেক সময়ই বেআইনি অস্ত্রের ক্রেতাদের অস্ত্রের সঙ্গে একই প্যাকেজে বিক্রি করা হয় ৭.৬৫ এমএম ও৮ এমএম বুলেট। আবার কখনও বা চাহিদা অনুযায়ী চোরাপথে বুলেটও বিক্রি হচ্ছে আলদাভাবে।

    গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বুলেটগুলিতে দেশের একটি সরকারি অস্ত্র কারখানারই ছাপ রয়েছে। ফলে সরকারি কারখানা থেকে বুলেট পৌঁছে যাচ্ছে দোকানে। নাগাল্যান্ড ও মণিপুর থেকে সংগ্রহ করা ভুয়ো অস্ত্র লাইসেন্স দেখিয়ে দোকান থেকে এই ধরনের বুলেট সংগ্রহ করা হয়।
  • Link to this news (প্রতিদিন)