মিল্টন সেন, হুগলি: স্বামী পছন্দ ছিল না। পুরোনো প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে পরিকল্পনা ছিল। আর পরিকল্পনা সফল করতে উপায় ছিল পথের কাঁটা স্বামীকে সরিয়ে দেওয়া। পরিকল্পনা ছকে নিয়েই, স্বামীকে খুন করার সুপারি দিয়ে ছিলেন খোদ স্ত্রী। বারো বছর পর নাবালক ছেলের সাক্ষীর ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত হলেন মা-সহ সাতজন।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১২ সালের ২৮ মার্চ, পোলবা থানার পাটনা গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ মালকে গলা কেটে খুন করা হয়। পুলিশ তদন্তে নেমে ঘটনাস্থলে গেলে, কৃষ্ণ মালের স্ত্রী রীনা মাল পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। ডাকাতই তাঁকে আর ছেলেকে হাত বেঁধে তার স্বামীকে খুন করে গয়না টাকা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতিরা তাঁকে ধর্ষন করে বলেও সেই সময় অভিযোগ করেছিলেন রীনা।
পোলবা থানার পুলিশ তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কৃষ্ণ মালের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী রীনা মালের বয়সের ফারাক ছিল প্রায় কুড়ি বছরের। তাঁদের বারো বছরের এক ছেলে রয়েছে।
ধীরে ধীরে জানা যায়, বলাগড়ের জিকো পাল নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল রীনার। জিকো বলাগড় থেকে পোলবায় যাওয়া আসা করত বাইক নিয়ে। সেই প্রেমিকের সঙ্গে যুক্তি করে পাঁচজন দুষ্কৃতিকে সুপারি দেওয়া হয় কৃষ্ণকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার দিন দুষ্কৃতিরা গভীর রাতে কৃষ্ণ মালের বাড়িতে ঢোকে। দরজা খুলে দেন রীনা নিজেই।
ডাকাচির ছক করলেও, রীনার জিকোর সঙ্গে প্রেম, তার স্বামীকে খুন সাজানো ডাকাতি সব পরিকল্পনা জানতে পারে তদন্তকারীরা। ৪ ঠা এপ্রিল একে একে অভিযুক্ত- রীনা মাল জিকো পাল, দীপঙ্কর পাল, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, লক্ষীকান্ত চক্রবর্তী, অভিজিৎ চক্রবর্তী, রাজা দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার চুঁচুড়া জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, এই মামলায় ১৮ জন সাক্ষী দিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মৃতের নাবালক ছেলের বয়ান।
ধর্ষনের যে অভিযোগ ছিল তা মেডিক্যাল পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়নি বলেও তথ্য। এদিন চুঁচুড়া আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক কৌস্তভ মুখোপাধ্যায় সাতজনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন। আগামী ২৬ জুলাই হবে সাজা ঘোষনা। রীনা মাল গত ১৩ বছর ধরেই হুগলি জেলে বন্দি। চারজন দুস্কৃতি একবার পুলিশের চোখে লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আবার ধরা পড়ে পুলিশের জালে। বর্তমানে অভিযুক্ত সকলেই বন্দী রয়েছে বিভিন্ন জেলে।ছবি পার্থ রাহা।