• হোয়াটসঅ্যাপের ডিপিতে ফনা তোলা বিষাক্ত সাপ, বন্যা বিদ্ধস্ত ঘাটালে যেখানে সাপের ভয় সেখানেই 'মলয়'-এর জয়...
    আজকাল | ২৫ জুন ২০২৫
  • বিভাস ভট্টাচার্য: কোথাও ফনা তোলা কেউটে বা গোখরো আবার কোথাও এলিয়ে থাকা ময়াল। তাঁর হাত থেকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। অবলীলাক্রমে সাপ ধরে ফেলেন তিনি। সেজন্যই প্রতি বছরের মতো এবারও পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা বিদ্ধস্ত এলাকায় দিনে বা রাতে বিষাক্ত সাপ ধরে মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন মলয় ঘোষ। 

    বয়স ৪৪-এর কোঠায়। সাপ ধরার নেশাটা বহু পুরনো। সমাজকর্মী হিসেবে স্বীকৃত মলয়ের কথায়, 'উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় থেকেই সাপ ধরে আসছি। বন দপ্তর থেকে একটা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। সেটা কাজে লাগছে। বাকিটা উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহস।' 

    এবছরেও বন্যা কবলিত হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, ক্ষীরপাই বা খরার পুরসভা বা আশেপাশের এলাকা। গর্তে বা আশ্রয়স্থলে জল ঢুকে পড়ার জন্য বাস্তুচ্যুত সাপেরা আশ্রয় নিচ্ছে মানুষের ঘরবাড়িতে। ঘটতে পারে সর্প দংশনের ঘটনা। সেজন্যই প্রশাসনের ডাক পেয়ে কাজে নেমে পড়েছেন ক্ষীরপাইয়ের পুরশুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মলয় ও তাঁর কয়েকজন সঙ্গী। তাঁর কথায়, গত কয়েকদিনে মোট ১৭৪টি বিষাক্ত সাপ ধরেছি। 

    এবিষয়ে চন্দ্রকোণা ব্লক ২-এর বিডিও উৎপল পাইক বলেন, 'সাপ ধরার জন্য যখনই প্রয়োজন পড়ে তখনই আমরা মলয় ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এবারের বন্যাতেও তিনি বিষাক্ত সাপ ধরে সহযোগিতা করছেন।' 

    তবে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত ২৪ বার বিষাক্ত সাপে কামড় দিয়েছে তাঁকে। এর মধ্যে পাঁচবার দিতে হয়েছে 'অ্যান্টি ভেনম'। তা সত্ত্বেও সরে আসেননি। হিসাব করে জানিয়েছেন ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধরেছেন মোট ২০,০০০ সাপ। এর মধ্যে আছে একটি ১১ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা ময়াল এবং সাড়ে সাত ফুটের একটি বিষাক্ত সাপ। 

    বাড়িতে বাবা, মা ও স্ত্রী ছাড়াও আছে দুই মেয়ে। ঝুঁকির এই কাজে তাঁরা কোনোদিন আপত্তি করেননি? মলয় জানিয়েছেন, 'প্রথম প্রথম আপত্তি করত। এখন আর করে না।' সাহসীকতার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে পেয়েছেন বহু পুরষ্কার। কিন্তু তাঁর কাছে সেরা পুরষ্কার হয় তখনই যখন ঘরে বা বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া বিষাক্ত সাপ ধরে সেই বাড়ির মানুষকে চিন্তামুক্ত করেন তিনি।
  • Link to this news (আজকাল)