১৮৮টি ওষুধ ফেল কেন্দ্রের পরীক্ষায়, মুখ পুড়ল বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির, বাতিল কলকাতার দুই ওষুধ সংস্থার লাইসেন্স...
আজকাল | ২৫ জুন ২০২৫
গোপাল সাহা
রোগীকে সুস্থ করার জন্য ব্যবহৃত ওষুধই হয়ে উঠছে অসুস্থতার কারণ, চিন্তা ভাজ ফেলছে চিকিৎসামহলে। সারা দেশে আবারও ১৮৮টি ওষুধ পরীক্ষায় ফেল করেছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের পরীক্ষায়। যার মধ্যে ২৭টি ওষুধ কলকাতার পরীক্ষাগারে ফেল করেছে।
ক্যাপসুল, ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ফেল করেছে পরীক্ষায়। এর মধ্যে রয়েছে একাধিক জীবনদায় ওষুধ যেমন, প্রসবের পরের রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ, রয়েছে বমি, বদহজম, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ সংক্রান্ত ওষুধ, হার্ট অ্যাটাক, এলার্জি, ব্লাড প্রেসার, স্নায়ু রোগ, মাইগ্রেনের ওষুধ সহ একাধিক।
ওষুধগুলির পরীক্ষায় উঠে এসেছে বেশ কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য-
১. কলকাতার ল্যাবে পরীক্ষা হওয়া অমৃতসরের এলার্জি ট্যাবলেট জলে দ্রবীভূত হচ্ছে না।
২. সিকিমের একটি সংস্থার তৈরি প্রসবের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়ার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ জাল বলে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল অর্থাৎ সিডিএসসিও (CDSCO)।
৩. গুজরাটে তৈরি প্রসবের পরে ব্যবহৃত ইনজেকশনের ভায়ালে মিলেছে ব্যাকটেরিয়া।
৪. হিমাচল প্রদেশে তৈরি বদহজমের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের মিলেছে রং।
৫. পুণের ওষুধ কোম্পানির তৈরি এজিথ্রোমাইসিন পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, যেখানে এজিথ্রোমাইসিন কম প্যারাসিটামল বেশি। যা রোগীর শরীরে নানাবিধ জটিলতা তৈরি করতে পারে।
৬. পাঞ্জাবে ওষুধ তৈরি সংস্থার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পরিমাণ ১০০ শতাংশ বদলে ১৮৯ শতাংশ। যা রোগীর জন্য বিপজ্জনক বলছেন চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন সব ওষুধ রয়েছে যেখানে ডোজের পরিমাণ বেশি হলে রোগী আরও একাধিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি রোগীর শরীরে 'আরবিসি' অর্থাৎ লোহিত রক্তকণিকা ও শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে যেতে পারে যার ফলে বা প্রাণহানিও হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্ট অনুযায়ী, বহু জীবনদায়ী ওষুধের মোড়কে কোনও প্রস্তুতকারী সংসার নাম, ঠিকানা বা তারিখের উল্লেখ নেই। রয়েছে শুধু সংস্থার নাম।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট-সহ একাধিক রাজ্যে অভিযান চালায়। সেই অভিযানেই যে সমস্ত ওষুধগুলি জাল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে বিজেপিশাসিত রাজ্য উত্তরাখণ্ডের ২৩টি এবং গুজরাটে ২৩টি জাল ওষুধ চিহ্নিত হয়েছএ। এনডিএ-শাসিত রাজ্য মহারাষ্ট্রে ১৬টি, মধ্যপ্রদেশে ১৩টি এবং পাঞ্জাবে ১২ টি ওষুধ জাল বলে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল।
এছাড়াও নামী সংস্থার মোড়কে জাল ওষুধ পাচারের অভিযোগে কলকাতায় দু’টি পাইকারি ওষুধ সংস্থার লাইসেন্স তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল। কলকাতার শিয়ালদার দুই পাইকারি ওষুধ সংস্থার নাম ডিডিএম ফার্মা ও জয়সওয়াল ফার্মা। প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগেই ড্রাগ কন্ট্রোলের অভিযান চালিয়ে দেশজুড়ে ১৯৮টি ওষুধ ফেল করে ওষুধের গুণমানের পরীক্ষায়। আবারও ফেল করল ১৮৮টি ওষুধ।
এই বিষয়ে আজকাল ডট ইনের তরফ থেকে কথা বলা হয়েছিল চিকিৎসক যোগীরাজ রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, "কেন্দ্র অথবা রাজ্য প্রত্যেক সরকারকেই আরও সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে সচেতন হতে হবে সাধারণ মানুষকে।“ তিনি আরও বলেন, "কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের উচিত ডাক্তার এবং সাধারণ মানুষকে এই সমস্ত বাতিল হওয়া ওষুধগুলি সম্পর্কে অবগত করা। একই সঙ্গে যে সমস্ত কোম্পানি এই ধরনের জাল ওষুধের ব্যবসা করছে তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর সাজা দেওয়া দরকার, না হলে এই জাল চক্র বন্ধ হবে না। কারণ প্রত্যেক মাসেই আমরা লক্ষ্য করছি বহু সংখ্যক ওষুধ জাল ধরা পড়ছে বা পরীক্ষায় ফেল করছে। যা নিয়ে সরকারের আরও কঠিন পদক্ষেপ ও নজরদারি খুবই জরুরি।"