ছাব্বিশের দেওয়াল লিখন স্পষ্ট, উপনির্বাচনে হিন্দু ভোটও খোয়াল বিজেপি
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৫ জুন ২০২৫
রাজ্যে ফ্লপ করল বিজেপির হিন্দুত্ববাদী প্রচার। ২০২৬-এর নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগোলেও দেওয়ালের লিখন স্পষ্ট হয়ে গেল। কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে ভরাডুবি হল গেরুয়া শিবিরের। পরিবর্তে উড়ল সবুজ আবির। ফলে হিন্দুত্ব ভোটকে টার্গেট করে রাজ্যের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন বিজেপির কাছে অধরাই থেকে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
গত বিধানসভা এবং লোকসভার চেয়ে বিজেপি ৩ শতাংশ ভোট শুধু কম পায়নি, গণনা শুরুর প্রথম তিন রাউন্ড এবং মাঝে পাঁচ-ছটি রাউন্ডে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছিলেন পদ্মের প্রার্থী আশিস ঘোষ। তৃণমূলের দাবি, ‘হিন্দুত্বে’র নামে জিগির তুলে যতই শুভেন্দু অধিকারী হইচই করুন না কেন, আসলে বাংলার মানুষ যে ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করছে, তার প্রমাণ কালীগঞ্জের নির্বাচন। ভোট প্রাপ্তির সমীকরণ বলছে, কালীগঞ্জের হিন্দু ভোটারদের একটা বড় অংশ বিজেপি থেকে তৃণমূলে সরে এসেছে। আর সেই কারণে ২০২১-এর চেয়ে ২০২৫-এ তৃণমূল প্রার্থীর ভোট বেড়েছে এবং বিজেপির ভোট কমেছে ৩ শতাংশের বেশি।
এবার নদিয়ার কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে ৫০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে শুধু গোহারা নয়, গত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের চেয়েও কম ভোট পেল পদ্ম-শিবির। ২০২১ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি ৩১ শতাংশের সামান্য কিছু ভোট পেলেও এবার মাত্র ২৮ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে পদ্মপ্রার্থী। উলটোদিকে গত বিধানসভা ও লোকসভার চেয়ে এবার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর ভোট শুধু বেড়েছে তাই নয়, শতাংশের বিচারেও ৫৫.১৫ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন জোড়াফুল প্রার্থী আলিফা আহমেদ। ৪ বছর আগে আলিফার বাবা প্রয়াত নাসিরুদ্দিন ৪৬ হাজার ৯৮৭ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন, সেখানে তাঁর কন্যা ৫০ হাজার ৪৯ মার্জিনে বিজেপিকে হারিয়ে বিধানসভায় পা রাখবেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বাম-সমর্থিত কংগ্রেস আগের চেয়ে সামান্য ভোট বাড়িয়ে ১৫.২১ শতাংশ সমর্থন পেলেও তৃতীয় হয়ে যথারীতি জামানত খুইয়েছেন। এই নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের পর বাংলায় গত এক বছরে যে ১১টি উপনির্বাচন হল, তার প্রত্যেকটিতে গোহারা হল বিজেপি, আগের চেয়ে বেশি মার্জিনে জিতলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থীরা।
ফলে এই ফলাফল শুধুমাত্র জয়-পরাজয়ের দিক থেকে নয়, বিধানসভা নির্বাচনের ন্যারেটিভ তৈরির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের দাবি, এবারের নির্বাচনে মেরুকরণের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে। উন্নয়নেই আস্থা রাখছে বাংলার মানুষ।