• বাসন আলাদা, এমনকী রাঁধুনিও! হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা রান্না পূর্বস্থলীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
    এই সময় | ২৫ জুন ২০২৫
  • স্কুল এক। একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসে পড়াশোনা করে ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু অভিযোগ, মিড ডে মিলের বাসনকোসন আলাদা। হাতা, খুন্তি থেকে শুরু করে রান্নার ওভেন — সব। এমনকী রাঁধুনি পর্যন্ত। সেখানে হিন্দু আর মুসলিমের লক্ষণরেখা টানা। হিন্দু পড়ুয়াদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। আর মুসলিম পড়ুয়াদের জন্য আলাদা। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর নসরতপুর পঞ্চায়েতের কিশোরগঞ্জ মনমোহনপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এটাই ঘটে চলেছে নিত্যদিন। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

    ঘটনার খবর চাউর হতে চমকে উঠেছেন অনেকেই। এমনও হয় নাকি! বিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা একতা, অভিন্নতার পাঠ পায়। সেখানে এই অবস্থা! কিন্তু কেন এই বিভাজন? গ্রামের বাসিন্দা গণেশ গোঁসাই বলছেন, ‘স্কুলের মধ্যে দুটো ভাগ হয়ে আছে। হিন্দু আর মুসলিম। এটা একেবারেই মানা যায় না। কিন্তু হচ্ছে। আমরা ওদের খাব না, ওরা আমাদের খাবে না। এই জন্যেই দু’ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।’

    হিন্দু ছাত্র ছাত্রীদের জন্য রান্না করেন সোনালি মজুমদার। আর মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন রানু বিবি। সোনালিকে ৩৫-৪০ জন ছাত্রের রান্না করতে হয়, আর রানুকে ১৫-২০ জনের। মজার বিষয় হলো, গ্যাস সিলিন্ডার একটাই। দু’দিকে পাইপ দিয়ে দুটো ওভেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি রাঁধুনিরা। সোনালি আর রানু শুধু জানালেন, তাঁদের যেমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনই করছেন। এর বেশি কিছু তাঁরা বলতে পারবেন না।

    তবে ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস ঘোষ। তিনি বলেন, ‘এভাবে চলুক আমি চাই না। স্কুলের ডবল খরচা হচ্ছে। আমি স্কুলের আরও উন্নতি চাই। আমি চাই, বাচ্চারা ভালোভাবে পড়াশোনা করুক, ভালোভাবে খাওয়াদাওয়া করুক।’ যেভাবে হোক এই সমস্যা মেটাতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

    এই বিষয়ে কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়ালকে ফোন করা হয়েছিল। তবে তিনি ফোন ধরেননি। ওসি মিড ডে মিল পৌষালি চক্রবর্তী বলেন, ‘বিষয়টা জানলাম। তবে খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’ গ্রামের বাসিন্দাদের এখন একটাই প্রশ্ন, বিভেদের এই রেখা কবে মুছবে?

  • Link to this news (এই সময়)