• কোলে করে জগন্নাথকে নিয়ে আসার পরেই রথে দেওয়া হয় ‘তিন টান’
    এই সময় | ২৫ জুন ২০২৫
  • আগের জৌলুস আর নেই। তবে রথের দিনে আজও মেনে চলা হয় পুরাতন প্রথা। আগে, রথের দিনে প্রভু জগন্নাথকে নিয়ে আসা হতো পালকি করে। কিন্তু এখন জগন্নাথকে নিয়ে আসা কোলে করে। তবে, আগের মতোই এখনও প্রভু জগন্নাথকে রথে বসিয়ে দেওয়া হয় ‘তিন টান’।

    এখন আগের মতন সব নিয়ম মানা না হলেও পুরাতন দিনের রীতিনীতি মেনে চলা হয় হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর জমিদার বাড়ির রথযাত্রায়।

    সালটা ছিল খুব সম্ভবত ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দ । উদয়নারায়ণপুরের তৎকালীন জমিদার বাবু ঈশানচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে পারিষদবর্গদের সঙ্গে নিয়ে দামোদর নদে স্নান করতে নেমে একটি কাঠের গুঁড়ি পেয়েছিলেন। স্বপ্নাদেশ অনুসারে সেই কাঠ দিয়েই রথ তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি l আর সেই থেকে শুরু উদয়নারায়ণপুরের বাবুদের রথযাত্রা।

    জানা গিয়েছে, অতীতে পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রার নিয়ম এবং নির্ঘন্ট অনুসরণ করে এখানেও রথের রশিতে টান পড়তো। খোল-করতাল, শাঁখ-কাঁসর ঘন্টার সহযোগে নামকীর্তনের মধ্য দিয়ে রথের দিন সকালে দেওয়া হতো ‘তিন টান’। বিকালে সকলের হাতের ছোঁয়ায় রথ এগিয়ে যেত। সেই সময় উদয়নারায়ণপুর রথতলা থেকে রথ যেত গজার দেবকালী পর্যন্ত । যদিও পরে যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত হয়ে এই রথ যেত শিবপুরের ছড়িপাড়া পর্যন্ত।

    স্বাধীনতা লাভের পরে জমিদারি প্রথার বিলোপ হলে পরিবারের সদস্যরা প্রভু জগন্নাথ দেবকে নিয়ে উদয়নারায়ণপুর ছেড়ে শিয়ালদহের বৈঠকখানা বাজারে থাকতে শুরু করেন। তবে বন্ধ হয়নি গ্রামের সেই রথ। সেই সময়, রথের দিন সকালে তৎকালীন হাওড়া-চাঁপাডাঙা শাখার মার্টিন রেলে করে প্রভু জগন্নাথ এবং পারিবারিক নারায়ণ শিলা নিয়ে আসা হতো জাঙ্গিপাড়া স্টেশনে। তার পর জাঙ্গিপাড়া স্টেশন থেকে সুসজ্জিত পালকি চড়ে উদয়নারায়ণপুর জমিদার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু কালের নিয়মে তাও বন্ধ হয়।

    এখন ওই জমিদার বাড়ির রথযাত্রার আয়োজন করছে রামকৃষ্ণ সারদা মাতৃ সংঘ । এই সংস্থার সম্পাদক শুক্লা সাঁতরা জানান, রথের দিন কোলে চাপিয়ে আনা হয় প্রভু জগন্নাথকে। সকালে প্রথা মেনে ‘তিন টান’দেওয়া হয়l বিকালে গ্রামবাসীরা রথযাত্রায় অংশ নেন। রথযাত্রার শেষে পালকিতে চড়ে প্রভু জমিদার বাড়িতে ফেরেন । সেখানে প্রভুকে ৯দিন ভোগ দেওয়া হয় l আগে রথযাত্রার দিন এলাকায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ-সহ গ্রামবাসীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা ছিল। তবে এখন শুধু উল্টোরথে মাতৃসংঘে ভোগ প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

    আগের ৩৫ফুট উচ্চতার রথ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরে নিম কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৩০ ফুট উঁচু এবং ২০ ফুট চওড়া রথ। তাতে আছে ন'টি চূড়া এবং আড়াই ফুট উচ্চতার ১২টি চাকা।

  • Link to this news (এই সময়)