অবৈধ বহুতল চিহ্নিত করেও সাহসী পদক্ষেপ নেই, শহরে বেআইনি নির্মাণ চলছেই, ক্ষোভ
বর্তমান | ২৫ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বর্ধমান শহরের অবৈধ নির্মাণগুলি বহুদিন আগেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, শুধু ওই টুকু করেই দায় সেরেছে বর্ধমান পুরসভা। পুরকর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে থাকায় অবৈধ নির্মাণকারীদের এখন পোয়া বারো। বিভিন্ন ওয়ার্ডেই আইন, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই তৈরি হচ্ছে বহুতল, এমনই অভিযোগ শহরের বাসিন্দাদের। মাঝে কিছুদিন পুরকর্তৃপক্ষ অবৈধ নির্মাণ ভাঙার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ায় আশার আলো দেখেছিলেন শহরবাসী। ঢলদিঘির কাছে একটি বহুতলের উপরের অংশে কয়েকটি ফুটো করে দেওয়া হয়। কয়েকজন ছাদে উঠে হাতুরির ঘা মারে। উৎসাহী শহরবাসী সেই ছবি মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন। নেটিজেনরাও কর্তৃপক্ষকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। তারপর আচমকাই অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিসের জোরে সব থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হল? ব্যক্তিগত সম্পর্ক নাকি রয়েছে অন্য রহস্য, এই প্রশ্নই শহরের অলিতে গলিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বর্ধমান পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, শহরের প্রায় ১০০টি অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করা হয়েছিল। নির্মাণকারীদের নোটিস পাঠানো হয়। প্রথম দিকে অবৈধ নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাদের এতটা বাড়বাড়ন্ত হতো না। ছোট গলির মধ্যেও নিয়ম না মেনে বহুতল মাথা তুলছে। আগুন ধরলে পুরো আবাসন ভস্মীভূত হয়ে যাবে। গলির মধ্যে দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার রাস্তা নেই। কিন্তু বহুতলের পারমিশন আছে। কিসের জোরে এসব হচ্ছে?
শহরের বাসিন্দারা বলেন, বর্ধমানে ফ্ল্যাটের দাম আকাশ ছোঁয়া। কলকাতাকে টক্কর দিচ্ছে। ‘ম্যানেজ’ করে ছোট জায়গার মধ্যে বহুতল তৈরি করছে। তাকে কয়েক লক্ষ লক্ষ টাকা তাদের ঘরে উঠছে। কিন্তু ফ্ল্যাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। যে কোনও সময় অঘটন ঘটতে পারে। অনেকে নিজের সঞ্চয় দিয়ে ফ্ল্যাট কিনছে। কোনও কারণে অঘটন ঘটলে তাঁদের পথে বসা ছাড়া আর উপায় থাকবে না। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকটি আবাসন থেকে কর জমা পড়ে না। অথচ পুরসভা ওই আবসনগুলিতে পরিষেবা দিচ্ছে। অবশেষে কয়েক দিন আগে প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসে। ওই আবাসনগুলি থেকে কর নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আধিকারিকদের অনেকেই মনে করছেন, অবৈধ নির্মাণকারীদের কাছে থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা আদায় করলেও পুরসভার ভাঁড়ার উপচে পড়ত। কিন্তু সেটাও করছে না। পুরকর্তৃপক্ষ না ভাঙছে বেআইনি নির্মাণ, না করছে জরিমানা আদায়। কিন্তু বেআইনি নির্মাণকারীরা বহাল তরিয়তে রয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার বলেন, অবৈধ নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কয়েকটি অবৈধ নির্মাণ আমরা ভেঙেছি। বেশ কয়েকজন নির্মাণকারীকে চিঠি করা হয়েছে। তাদের অনেকে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে। সেই কারণে পদক্ষেপ করতে সময় লাগছে। তবে দেরি হলেও অবৈধ নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের এক বাসিন্দা বলেন, পুরসভা আদালতের নির্দেশে কয়েকটি অবৈধ নির্মাণ ভেঙেছে। কিন্তু তারা নিজে থেকে কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। তবে শুধু শহর নয়, বর্ধমান লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতেও বহু নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।