রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য বোধনা নিকেতন চত্বরে উন্নয়নের কাজ শুরু করল ঝাড়গ্রাম প্রশাসন
বর্তমান | ২৫ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রামের বাঁশতলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য ‘বোধনা নিকেতন’ স্কুল চত্বরে উন্নয়নের কাজ শুরু করল জেলা প্রশাসন। অবশ্য এই স্কুলের নাম এখন আর বোধনা নিকেতন নেই। নাম বদলে হয়েছে লীলাবতী শিক্ষা সদন। স্কুল লাগোয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে কমিউনিটি শৌচালয়। স্কুলের পাশেই পানীয় জলের সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ব্লক প্রশাসন থেকে স্কুলের পাশে বসানো হয়েছে সোলার লাইট। ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ থেকে পানীয় জলের জন্য ১২ লক্ষ ২০ হাজার ও শৌচালয়ের জন্য ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নিশীথ মাহাত। তিনি বলেন, ওই স্কুলটি বাঁধগোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খাসডাহি মৌজায় অবস্থিত। সাবমার্সিবল পাম্প ও শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
তবে, এই স্কুলে কোনও পড়াশোনা হয় না। স্কুলটি ভোটকেন্দ্র হিসেবেই কাজে লাগে। সেই জন্যই এই উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ২২২/২২৫ এই বুথে স্থানীয় বাঁশতলা, খাসডাহি, টুকরুভোলা ও টিয়াকাটি গ্রামের ভোটাররা ভোট দেন। এর আগে এখানে আলো, পানীয় জল ও শৌচালয়ের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্রে জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে বোধনা নিকেতন নামে মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য এই স্কুল নির্মাণে উদ্যোগী হন ব্যারিস্টার গিরিজাভূষণ মুখোপাধ্যায়। স্কুলটি উদ্বোধনের সময় রবীন্দ্রনাথ নিজে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তিনি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে ছিলেন। সেই শুভেচ্ছা বার্তায় বলা হয়, ‘যা দৈববশে লুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তাকে পুনরায় জাগাও’। পরবর্তীকালে ৭০-এর দশকে হাওড়ার প্রখ্যাত ব্যবসায়ী তারাপদ সাউ বাঁশতলার স্টেশন সংলগ্ন জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকায় তৈরি করেন কড়াই তৈরির কারখানা ও কৃষি খামার। ১৯৭৩ সাল নাগাদ ঝাড়গ্রামের সেবাইতনে এসেছিলেন আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও নাট্যকার মন্মথ রায়। তারাপদবাবুর আমন্ত্রণে তাঁরা সবাই বাঁশতলায় আসেন। সেইসময় এই বোধনা নিকেতনের কাজ জোর কদমে শুরু হয়। তবে স্কুলের নাম বদলে তারাপদবাবুর স্ত্রীর নামে লীলাবতী শিক্ষাসদন রাখা হয়। বাম আমলে ‘জনশিক্ষা প্রসার সমিতি’ অনুমতি দখল হিসেবে স্কুলটি চালু করার উদ্যোগ নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা গৃহশিক্ষক দিলীপ মাহাত বলেন, এই বাঁশতলা এলাকায় আমাদের মনীষীরা বৃহত্তর চিন্তাভাবনা নিয়ে স্কুলটি নির্মাণ করেছিলেন। সেই সময় একেবারে জঙ্গলের ভিতরে এখানে কোনও ট্রেন দাঁড়াত না। তাঁদের উদ্যোগেই এখানে বোধনা রেলস্টেশন তৈরি হয়। পরবর্তীকালে এই স্টেশনে নাম বদলে হয় বাঁশতলা। উন্নয়নের কাজ হলে ভালোই হয়।