• মাছির তাণ্ডব বাঁকুড়ায়! বিক্ষোভ
    আনন্দবাজার | ২৫ জুন ২০২৫
  • মাছি আর মাছি! চারিদিকে ভনভন করছে হাজার হাজার মাছি। মাছির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মাসখানেক আগে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন স্থানীয়েরা। সে সময় মিলেছিল প্রশাসনিক আশ্বাস। কিন্তু সেই আশ্বাসই সার। এতটুকুও কমেনি মাছির তাণ্ডব। অগত্যা বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লক ও ছাতনা ব্লকের সীমানায় থাকা ১০ থেকে ১২টি গ্রামের মানুষের মশারির ভিতরেই চলছে দিনযাপন।

    বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের কাশিবেদিয়া এলাকায় রয়েছে একাধিক বেসরকারি হ্যাচারি। হ্যাচারিগুলি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন না করায় এবং নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে না করায় সেগুলিতে প্রতিদিন হাজারে হাজারে জন্ম নিচ্ছে মাছি। সেই মাছি ছড়িয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী কাশিবেদিয়া, তেঘরি, জগন্নাথপুর, বাঘজুড়ি, দলদলি, পড়্যাশোল, বেলিয়া-সহ ১০-১২টি গ্রামে। দিনভর সেই মাছির তাণ্ডবে রীতিমত অতিষ্ঠ গ্রামগুলির বাসিন্দারা। মাছির অত্যাচারে বিক্রি কমে যাওয়ায় স্থানীয় খাবার ও মিষ্টির দোকানগুলি প্রায় বন্ধের মুখে। গ্রামের বাড়িগুলিতেই স্বস্তি নেই। ওই গ্রামগুলির প্রতিটি বাড়িতে ভনভন করছে মাছির দল। রান্না করার সময় মাছি গিয়ে পড়ছে রান্না করা খাবারে। অগত্যা প্রায়শই ফেলে দিতে হচ্ছে রান্না করা খাবার। মাছি বাঁচিয়ে কোনও ক্রমে রান্না করা গেলেও বাড়ির খোলা জায়গায় খাওয়াদাওয়া হয়ে পড়েছে কঠিন। অগত্যা দিনের বেলায় ঘরের একাংশে টাঙিয়ে রাখতে হচ্ছে মশারি। খাবার সময় স্থানীয়েরা খাবার নিয়ে ঢুকে পড়ছেন মশারির ভিতর। মাছির অত্যাচারে লাটে উঠতে বসেছে পড়ুয়াদের লেখাপড়ায়। লেখাপড়ায় মনসংযোগ ধরে রাখতে দিনের বেলাতেও মশারির ভিতরে ঢুকে লেখাপড়া করছে। এমন অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার দাবি নিয়ে সোমবার ফের হ্যাচারিরগুলির সামনে হাজির হন স্থানীয় একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা। সড়কের ধারে থাকা হ্যাচারিগুলির গেটে প্রবল বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। খবর পেয়ে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী।

    স্থানীয় বাসিন্দা অপূর্ব মণ্ডল বলেন, ‘‘হ্যাচারি ও হ্যাচারি সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যেত মাছির বাড়বাড়ন্ত। মাস খানেক আগে আমরা পথ অবরোধ করলে সেই আশ্বাস দিয়েছিল হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। একমাস কেটে গেলেও হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ না করায় এখন আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রয়োজনে আমরা হ্যাচারি বন্ধ করতে বাধ্য হব।’’

    বেসরকারি হ্যাচারির আধিকারিক সত্য কুন্ডু বলেন, ‘‘মাসখানেক আগে গ্রামবাসীদের আশ্বাস দেওয়ার পর থেকে হ্যাচারি ও হ্যাচারি সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করা হয়। তা সত্ত্বেও সম্প্রতি কয়েক দিন টানা বৃষ্টির কারণে এলাকায় মাছির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসুয়া রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি এতটা গুরুতর, তা আমাদের জানা ছিল না। হ্যাচারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এলাকায় মাছির তাণ্ডব ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)