‘বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়’, হলদিয়ায় পরিচারিকাকে ধর্ষণ ও খুনে ফাঁসির বদলে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিল হাই কোর্ট
আনন্দবাজার | ২৫ জুন ২০২৫
‘‘প্রমাণ শক্তিশালী। তবে অপরাধ বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়।’’ ২০১৬ সালে হলদিয়ায় তরুণী ধর্ষণ এবং খুনকাণ্ডে এমনই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাই কোর্টের। মঙ্গলবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ অপরাধীর ফাঁসির শাস্তি রদ করে ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে।
আসামির নাম শ্রীমন্ত তুঙ্গ। পূর্ব মেদিনীপুরে হলদিয়া ডক কমপ্লেক্সের অস্থীয় কর্মী ছিলেন তিনি। তাঁর বাড়িতে কাজ করত বছর চোদ্দোর এক নাবালিকা। মেয়েটির বাবা ছিলেন না। পরিবারের হাল ধরতে বাড়ি বাড়ি কাজ করত সে। শ্রীমন্তের বাড়িতে কাজের বিনিময়ে মাসে হাজার তিনেক টাকা পেত। ২০১৬ সালের ৮ অগস্ট মেয়েটির মামাকে ফোন করেন শ্রীমন্ত। জানান, তাড়াতাড়ি যেন তাঁর বাড়িতে যান ওই ব্যক্তি। তাঁর ভাগ্নি অসুস্থ। ফোন পেয়েই শ্রীমন্তের হলদিয়ার বাড়িতে ছোটেন ওই ব্যক্তি এবং নাবালিকার মা। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনি চমকে যান। দেখেন বাড়িতে কেউ নেই। আর শৌচাগারে তাঁর ভাগ্নির দগ্ধ দেহ পড়ে রয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তদন্ত শুরু হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট হয়, নাবালিকাকে একাধিক বার ধর্ষণ করা হয়। তার পর শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করা হয়। এবং প্রমাণ লোপাটের জন্য কেরোসিন ঢেলে মেয়েটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে গ্রেফতার হন শ্রীমন্ত।
গত ২০১৮ সালে বছর পঞ্চাশের শ্রীমন্তকে ধর্ষণ, খুন, প্রমাণ লোপাট-সহ পকসো আইনের ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে হলদিয়া মহকুমা আদালত। ওই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বর্ণনা করে আসামিকে ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শ্রীমন্ত হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানিতে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘অপরাধ খুবই গুরুতর। আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণও খুবই শক্তিশালী।’’ যদিও ঘটনাটিকে বিরলের মধ্যে বিরলতম মনে করছে না উচ্চ আদালত। কারণ, এর আগে আসামি কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সেই সঙ্গে তিনি মানসিক ভাবেও স্থিতিশীল। তাই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, সেটা বহাল থাকছে। তবে শাস্তি হিসাবে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে নিঃশর্ত ২০ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আসামির বয়স এখন ৫৮ বছর। কারাবাসের সময় তাঁর মেয়াদ কমানো বা প্যারোলে ছাড়া পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।