ভোলা, সুমন, বাসন্তীকে অবলিম্বে ফেরাতে হবে রাজ্যে! হাতি পাচার নিয়ে কড়া নির্দেশ হাই কোর্টের
আনন্দবাজার | ২৫ জুন ২০২৫
হাতি পাচার নিয়ে রাজ্য সরকারকে কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। রাজ্যের উদ্দেশে আদালত জানায়, হাতি পাচার রোধে গা-ছাড়া মনোভাব নিলে চলবে না। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। বিচারপতি রবিকৃষ্ণ কপূর এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘জীবজন্তুর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।’’ এর পরেই পাচার হওয়া তিনটি হাতি খুঁজে বিহার থেকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চের রায়, ওই হাতিগুলি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্পত্তি। তাই অবিলম্বে রাজ্যের বন দফতরের প্রধান (চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন)-কে বিহার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই হাতিগুলি ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
হাতি পাচার নিয়ে কেপ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে। তাদের অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে ২৪টি হাতি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেআইনি ভাবে অন্য রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ভোলা, সুমন এবং বাসন্তী নামে তিনটি হাতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ওই তিনটি হাতি আগে নটরাজ সার্কাসে ছিল। ২০১৭ সালে এক উপহারপত্র (গিফট ডিড)-এর মাধ্যমে সার্কাস কর্তৃপক্ষ এই হাতিগুলিকে বিহারের গোপালগঞ্জ জেলার এক আশ্রমে পাঠিয়ে দেন। আশ্রমের মহন্ত সত্যদেব দাস দাবি করেন, তিনি এখন এই হাতিগুলির মালিক। অথচ ২০১৩ সালে নটরাজ সার্কাসের মালিকানার শংসাপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। প্রশ্ন উঠছে, ২০১৭ সালে তারা কী ভাবে হাতিগুলিকে আশ্রমকে দিল?
মামলাকারীর বক্তব্য, অন্য রাজ্যে হাতি পাঠাতে গেলে বন দফতরের অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। বেআইনি ভাবে ওই হাতিগুলি পাচার করা হয়েছে। এর আগে চিহ্নিত তিনটি হাতিকে হাই কোর্টের নির্দেশে বিহারে দেখতে পাঠানো হয়। মামলাকারীর আইনজীবী জানান, হাতিগুলিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাদের চর্মরোগ হয়েছে। পায়ে ক্ষত রয়েছে। চিকিৎসা বা পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে না। ওই হাতিগুলিকে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ মামলাকারীর।
এর আগে ২০২২ সালে বিহারের গোপালগঞ্জ ডিএফও আদালতের নির্দেশে আশ্রম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হাতিগুলি আশ্রমে নেই। আশ্রমের মহন্ত সত্যদেব দাস পলাতক। এখনও ওই হাতিগুলির খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আদালতের নির্দেশ, হাতিগুলিকে অবিলম্বে খুঁজে বার করে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার মিলিত ভাবে সেই কাজ করবে। ভবিষ্যতে এমন বেআইনি হাতি পাচার রুখতে সীমান্তে নজরদারি ও কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। বন্যপ্রাণীদের প্রতি সহানুভূতি, সুরক্ষা ও মর্যাদা বজায় রাখা রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব।