• শেষ হচ্ছে সময়সীমা, কাটেনি ডিএ নিয়ে ধোঁয়াশা
    আনন্দবাজার | ২৫ জুন ২০২৫
  • হাতে মাত্র একটা দিন। তার পরেই শেষ হচ্ছে বকেয়া ডিএ দেওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া ছ’সপ্তাহের সময়সীমা। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, তা নিয়ে জোর দিয়ে বলতে পারছেন না প্রশাসনের কেউই। তাই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন ডিএ মামলাকারীরা। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, এই অবস্থায় আদালত অবমাননা মামলার পথও খোলা রাখা হচ্ছে।

    গত ১৬ মে অন্তর্বর্তী রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাতে বলা হয়েছিল, বকেয়া ডিএ-র অন্তত ২৫% মিটিয়ে দিতে হবে ছ’সপ্তাহের মধ‍্যে। মামলাকারী কর্মচারী সংগঠনগুলির দাবি, সেই হিসেবে সময়সীমাটি শেষ হচ্ছে আগামিকাল, বৃহস্পতিবার। তার মধ্যে নবান্নের তরফে কোনও বার্তা না পাওয়া গেলে, প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের আইনি চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন মামলাকারীরা। তবে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলির একাংশ দাবি করছে, ডিএ দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরেই টানাপড়েন অব‍্যহত। তাতে আধিকারিকদের একটি অংশ মনে করছেন, আদালতের রায় মেনে ডিএ মিটিয়ে দেওয়া উচিত সরকারের। অপর একটি অংশ তার সঙ্গে সহমত হচ্ছে না। তবে ডিএ সম্পর্কে নবান্ন ঠিক কী ভাবছে, তা নিয়ে কোনও বার্তা বা ইঙ্গিত সরকারি ভাবে দিতে রাজি হচ্ছেন না আধিকারিকদের কেউই।

    মূল মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সভাপতি শ‍্যামল কুমার মিত্র বলেন, “২৬ তারিখের মধ্যে সরকার কিছু না জানালে মুখ‍্যসচিব এবং অর্থসচিবকে আইনি চিঠি পাঠানো হবে। কেন আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হবে। তাঁদের উত্তর না পেলে দায়ের হবে অবমাননার মামলা।” অপর মামলাকারী সংগঠন রাজ‍্য কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, “এখনও পর্যন্ত বকেয়া ডিএ নিয়ে কিছু জানা যায়নি। সরকার কী করবে, তা বোঝাও যাচ্ছে না। সরকার শীর্ষ আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশ মানছে না বলেই আমাদের ধারণা। তাই সময় পেরিয়ে গেলে আইনি নোটিস দেওয়া এবং আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হবে।”

    পশ্চিমবঙ্গ পেনশন সংগঠনের সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বেঁধে দেওয়া সময় অতি শীঘ্রই পেরিয়ে যাবে। স্বাভাবিক ভাবেই সর্ব স্তরের কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের কাছে একটাই উপায় থাকবে— রাস্তায় নামা।”

    প্রসঙ্গত, সরাসরি রাজ্য সরকারি কর্মচারী, গ্রান্ট-ইন-এড কর্মী এবং পেনশনভোগী মিলিয়ে প্রায় ৪১ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে ডিএ। সেই বকেয়ার ২৫% ডিএ দেওয়ার কথা রাজ্যের। তা দিতে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই দু’দফায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে নবান্ন। ফলে প্রশাসনের অনেকেই মনে করেছিলেন, এই ঋণ নেওয়ার বার্তা হয়তো বকেয়া ডিএ মেটানোর পদক্ষেপের একটা ইঙ্গিত। কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, সর্বোচ্চ আদালতে এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চললেও, রায়ের আংশিক সংশোধন সংক্রান্ত একটি আর্জি জানিয়ে রেখেছে রাজ‍্য। যদিও তা এখনই তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু যতদিনে সুপ্রিম কোর্টের কাজ পুরোপুরি চালু হবে, ততদিনে ডিএ-সময়সীমাও পেরিয়ে যাবে। তাই এই পরিস্থিতিতে গোটা বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ প্রশাসনের ‘নীরবতার’ ভিন্ন অর্থও থাকতে বলে মনে করছেন তাঁরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)