• জঞ্জালের গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হঠাৎ ভবঘুরে, ধাক্কায় মৃত্যু হল বৃদ্ধার
    আনন্দবাজার | ২৫ জুন ২০২৫
  • কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল ফেলার গাড়়িতে উঠে চালকের আসনে বসে গাড়িটি নিয়ে দ্রুত বেগে পালানোর চেষ্টা করছিল এক ব্যক্তি। ঠিক সেই সময়ে উল্টো দিক থেকে হেঁটে আসছিলেন এক বৃদ্ধা ও তাঁর নাতনি। দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন তার ঠাকুরমা। অন্য একটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে সেই গাড়িটি পর পর ধাক্কা মারে ওই দু’জনকে। এই ঘটনায় মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। তাঁর নাম এষা মুখোপাধ্যায় (৭৪)। জখম হয়েছে তাঁর নাতনি সৌমিলি। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে সিঁথি থানা এলাকার নর্থ ক্যালকাটা পলিটেকনিক কলেজের কাছে গোবিন্দ মণ্ডল লেনে। ঘটনাস্থলের কাছেই মৃতার বাড়ি। পুলিশ এই ঘটনায় অভিযুক্ত সুরিন্দর মিশ্রকে গ্রেফতার করেছে। তার বাড়ি বৌবাজার এলাকায়। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, সুরিন্দর আদতে ভবঘুরে। সম্ভবত মানসিক কিছু সমস্যাও রয়েছে। কেন সে পুরসভার গাড়ি নিয়ে পালাচ্ছিল, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

    পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছে একটি ভ্যাট থেকে জঞ্জাল তুলতে গিয়েছিল পুরসভার ব্যাটারিচালিত একটি জঞ্জালের গাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চালক গাড়ি থেকে নেমে জঞ্জাল তোলার সময়ে মাঝবয়সি সুরিন্দর হঠাৎ ওই গাড়ির চালকের আসনে উঠে বসে এবং গাড়িটি চালাতে শুরু করে। গাড়িটি বেশ জোরেই চালাচ্ছিল সে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পার করে গাড়িটি নিয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে যায় সুরিন্দর। সেই সময়ে উল্টো দিক থেকে একটি গাড়ি আসছিল। আর রাস্তার বাঁ দিক দিয়ে হেঁটে আসছিলেন এষা ও সৌমিলি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই গাড়িটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে একেবারে বাঁ দিক ঘেঁষে চালাতে যায় সুরিন্দর। তখনই প্রথমে সৌমিলিকে ধাক্কা মারে জঞ্জালের গাড়িটি। সৌমিলির কথায়, ‘‘জঞ্জালের গাড়িটা অন্য গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে প্রথমে আমাকে প্রবল জোরে ধাক্কা মারে। আমি রাস্তায় পড়ে যাই। গাড়িটি আমার ডান পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। আমাকে ওই ভাবে ধাক্কা মেরেও সেটি বেপরোয়া গতিতে চলতে থাকে। ওই সময়ে আমাকে ধরার জন্য আসতে গিয়ে ঠাকুরমা টাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে যান। তাঁর মাথাটি একটি ইটের উপরে পড়়ে। তখনও ওই চালকের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ ছিল না। এর পরে গাড়়িটা ঠাকুরমার ডান হাতের উপর দিয়ে চলে যায়।’’ দু’জনকে পর পর ধাক্কা মেরেও সেই গাড়ি থামেনি। যা দেখে স্থানীয় কয়েক জন তাড়া করে গাড়িটিকে আটকান। সুরিন্দরকে টেনে নামান তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, ভবঘুরে সুরিন্দর মানসিক ভাবে অসুস্থ বলেই এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে।

    এ দিন সন্ধ্যায় গোবিন্দ মণ্ডল লেনে সৌমিলিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকস্তব্ধ সকলেই। ওই ছাত্রীর দু’টি পা-ই বেশ ফুলে রয়েছে। বাড়ির লোকজন তাতে বরফ দিচ্ছেন। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতেই সৌমিলি বলল, ‘‘ময়লার গাড়িটা যে ভাবে আমাদের দু’জনকে পর পর ধাক্কা মারল, তাতেই বোঝা যাচ্ছিল, চালকের কোনও দিকেই ভ্রুক্ষেপ নেই। দু’জনকে ধাক্কা মারার পরে গাড়িটা চলে যেতে আমি কোনও মতে উঠে ঠাকুরমাকে ধরে পাশের একটি দোকানের সামনে বসাই। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ির লোকজন এসে ঠাকুরমাকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বেলা ১২টা নাগাদ ঠাকুরমা মারা যান।’’ সৌমিলি আরও বলল, ‘‘দুর্ঘটনার পরে ঠাকুরমার মাথার ডান দিক থেকে প্রবল রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ডান হাতের কনুইয়ের অংশ থেকে রক্ত-মাংস বেরিয়ে এসেছিল। চোখে দেখা যাচ্ছিল না।’’ সৌমিলির মা চৈতালী বলেন, ‘‘অন্যান্য দিন আমিই মেয়েকে স্কুলে রাখতে যাই। এ দিন শাশুড়ি মা রাখতে গিয়ে সব শেষ হয়ে গেল!’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)