• আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন, পদ্ম-শিবিরের তাস সেই হিন্দুত্ব
    এই সময় | ২৫ জুন ২০২৫
  • বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসনসোল

    গত সপ্তাহে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এসেছিলেন আসানসোলে। পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন উপলক্ষে এখানকার গেরুয়া শিবির রীতিমতো চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। ছিলেন বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল-ও। উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং শাসকদলকে লক্ষ্য করে ছুড়ে দেওয়া চড়া দাগের মন্তব্য সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটালেও সেই উন্মাদনা দীর্ঘস্থায়ী হবে তো?

    শেষ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম বর্ধমানের ৯টি আসনের মধ্যে তিনটি দখল করেছিল পদ্ম-শিবির। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় সাড়ে চার বছর। জেলায় বিজেপির সার্বিক কর্মকাণ্ডে এমন কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি, যা দেখে পরিবর্তনের কথা ভাবা যেতে পারে।

    বিশেষ করে, আসানসোল মহকুমা এখনও বড় কাঁটা বিজেপির কাছে। এখানে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোটার মুসলিম, যেখানে শুধুমাত্র হিন্দুত্বের স্লোগান তুলে বাজিমাত করার কোনও সম্ভাবনাই নেই। এই মুহূর্তে জেলায় মোট বুথের সংখ্যা ১৯০৭। অথচ ৬৫ শতাংশেরও বেশি এলাকায় গেরুয়া ভক্তরা বুথ কমিটিই গড়ে তুলতে পারেনি।

    দলের এক প্রবীণ নেতার আফসোস, ‘বুথ কমিটি গড়তে গেলে অন্ততপক্ষে ১২ জন কর্মী এবং ৫০ জন সমর্থকের প্রয়োজন। দুর্ভাগ্য এটাই যে, এই বুথগুলিতে ১০ জন সমর্থকও নেই আমাদের!’ তিনি এ-ও জানাচ্ছেন, আসানসোল, কুলটি, বারাবনি এবং পাণ্ডবেশ্বরের মতো জায়গায় বিজেপির সংগঠন বলে কোনও বস্তুই নেই। এই শক্তি নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করা অসম্ভব।

    শেষ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল আসানসোল দক্ষিণ, দুর্গাপুর পশ্চিম এবং কুলটিতে। কিন্তু মজার বিষয়, শেষ লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপির থেকে আসন ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। জিতেছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা।

    কেন এই বদল? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতার স্বীকারোক্তি, ‘মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে আমাদের দল দাঁতই ফোটাতে পারেনি। এখানে তো আমরা এখনও পর্যন্ত বুথ কমিটিই গড়তে পারিনি। রাজ্য স্তরের নেতাদের বিষয়টি নিয়ে অনেক বার বলা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত কিছুই হয়নি।’

    তবে সেখানেই শেষ নয়। জেলা স্তরে রয়েছে তীব্র সঙ্ঘাত। রাজ্য বিজেপিতে যেমন বিভাজন স্পষ্ট, এখানেও রয়েছে দু’টি শিবির। একটি শিবিরে রয়েছেন পুরোনো বিজেপি এবং আরএসএস-পন্থীরা। সেখানে রয়েছেন লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, অগ্নিমিত্রা পাল, কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো নেতা। অন্য শিবিরে রয়েছে তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে আসা এবং শুভেন্দুর পছন্দের অনুগামীরা। সেই শিবিরে রয়েছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি, অরিজিৎ রায়, অভিজিৎ আচার্যের মতো মুখ। ফলে ঐক্যের কোনও বার্তাই নেই।

    তার পরেও উগ্র হিন্দুত্বের স্লোগানেই আস্থা রাখছে বিজেপি। দলের আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য বলছেন, ‘হিন্দুত্বই আমাদের অস্ত্র। জেলার হিন্দু ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। বুথ কমিটি গড়ার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। বারাবনিতে আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে ঠিকই, বাকি জায়গাগুলিতে বিজেপির প্রতি মানুষের সমর্থন কিন্তু ধীরে ধীরে বাড়ছে। তৃণমূলের লড়াই সহজ হবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)