• বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, দামোদরের উপরে ১৮টি নতুন সেতু
    এই সময় | ২৫ জুন ২০২৫
  • রাকিব ইকবাল, উদয়নারায়ণপুর

    ফি বছর বন্যা। তার জেরে জলের স্রোতের ধকল সামলে উঠতে না পেরে, হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ত একের পর এক কাঠের সেতু। মুখ থুবড়ে পড়ত হাওড়া গ্রামীণের উদয়নারায়ণপুর ব্লকের মজা দামোদর নদের দুই পাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

    এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে একটু একটু করে বন্যার জল ও মজা দামোদরের স্রোত কমলে, কাঠের সেতু মেরামতে নামত সেচ দপ্তর ও ব্লক প্রশাসন। এটাই ছিল ফি বছরের যন্ত্রণা।‌ এই যন্ত্রনা থেকে পাকাপোক্ত ভাবে রেহাই পেতে চাইছিলেন বন্যাকবলিত উদয়নারায়ণপুর ব্লকের বাসিন্দারা। অবশেষে সেই ব্লকে মজা দামোদরের উপরে ১৮টি জায়গায় পাকা সেতু নির্মিত হলো।‌

    ওয়েস্ট বেঙ্গল মেজর ইরিগেশন ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে এই সেতুগুলি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, রামপুর–ডিহিভুরশুট-আসন্ডা, কুরচি শিবপুর, সিংটি, কানুপাট মনসুকা, গড়ভবানীপুর সোনাতলা এই পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে পাকা সেতুগুলি নির্মাণ করা হয়েছে।‌ ১৮টি সেতুর মধ্যে ডিহিভুরশুট কালীতলার সেতু লোহা দিয়ে নির্মিত, সেচ দপ্তরের ভাষায় যাকে লো কস্ট ব্রিজ বলা হয়।‌ বাকি সেতুগুলি কংক্রিটের তৈরি।

    উল্লেখ করা যায়, মূল দামোদর থেকে একটি শাখা উদয়নারায়ণপুর ব্লক হয়ে আমতা দুই নম্বর ব্লকে প্রবেশ করেছে।‌ যা ‘মজা দামোদর’ বলেই পরিচিত।‌ এই মজা দামোদরের উপরে যোগাযোগ রক্ষার জন্য ছিল অসংখ্য কাঠের সেতু।‌ এই সব সেতু ব্যবহার করে ডিহিভুরশুট হানাগোড়া, কালীতলা, ঘোলা, বালিচক, কুরচি পাত্রপাড়া, কয়লাগোলা, শিবপুর ধর্মতলা, সিংটি বামুন পাড়া, পুরপাট, কানুপাট, গুমগড়, কুমারচক, সোনাতলা করাতকল, গড়ভবানীপুর বাজার, কানুপাট দক্ষিণ এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াত করেন।

    কিন্তু প্রতি বছর ডিভিসির অতিরিক্ত ছাড়া জলের চাপে ভরে উঠত মজা দামোদর।‌ বন্যার বিপুল জলের চাপে ভেঙে পড়ত এই সব এলাকার কাঠের সেতুগুলি। এ ছাড়াও, কয়েকটি কংক্রিটের সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বন্যায়। সেতুগুলি ভেঙে পড়ার পরে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন ভেঙে পড়ত, তেমনই সমস্যায় পড়তেন কৃষিজীবী মানুষজন।‌

    বন্যার সময় ছাড়াও অন্য সময়ে কাঠের সেতুর কারণে কৃষিপণ্য নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতো তাঁদের। সেচ দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মেজর ইরিগেশন অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচারের যৌথ আর্থিক সহযোগিতায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজ্যের পাঁচটি জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের এই কাজের অঙ্গ হিসেবে উদয়নারায়ণপুর ব্লকের ১৮টি ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে। উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘দীর্ঘদিন মানুষের দাবি ছিল, এই সেতুগুলিকে পাকাপোক্ত ভাবে তৈরি করা হোক। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বন্যাকবলিত উদয়নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দাদের সেই দাবি পূরণ করেছেন।

  • Link to this news (এই সময়)