হাটগাছা পঞ্চায়েতেই তৃণমূল প্রার্থী লিড পেয়েছেন ১২ হাজার ভোটে
বর্তমান | ২৬ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে একা হাটগাছা পঞ্চায়েত থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে পাহাড়প্রমাণ লিড। এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল বিরোধী শিবির থেকে এগিয়ে রয়েছে ১২ হাজার ভোটে। অর্থাৎ তৃণমূলের সামগ্রিক লিডের চার ভাগের একভাগ এই একটি পঞ্চায়েত থেকেই এসেছে, যা কালীগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেনজির বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই পঞ্চায়েতে কালীগঞ্জ তৃণমূল ব্লক সংগঠনের একচেটিয়া দাপট রয়েছে। তার জেরেই লিড দেওয়ার নিরিখে বিধানসভার অন্যান্য পঞ্চায়েতকে ছাপিয়ে গিয়েছে হাটগাছা। উপ নির্বাচনে অভূতপূর্ব এই ফলাফল ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অক্সিজেন জুগিয়েছে ঘাসফুল শিবিরকে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ ছাব্বিশের আগে কালীগঞ্জের এই উপনির্বাচন শাসক দলের কাছেও অ্যাসিড টেস্ট ছিল। রেকর্ড মার্জিনে লিড নিয়ে রাজ্যজুড়ে বিরোধী শিবিরকে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়াও ছিল ঘাসফুল শিবিরের অন্যতম উদ্দেশ্য। আর সেই অ্যাসিড টেস্টে লেটার পেয়ে পাশ করেছে ঘাসফুল শিবির। কালীগঞ্জ বিধানসভায় তৃণমূল জিতেছে ৫০ হাজার ভোটে।
কালীগঞ্জ বিধানসভায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হাটগাছা পঞ্চায়েত তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। গত লোকসভা নির্বাচনেও এই পঞ্চায়েত থেকে ১০ হাজার ভোটের লিড ছিল তৃণমূলের। তবে এই উপ নির্বাচনে অতীতের লিডকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের শক্তিশালী সংগঠনের কারণে এই কেন্দ্রে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিরোধী শিবির। তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ এই পঞ্চায়েত থেকে প্রচার পর্ব শুরু করেছিলেন। যদিও সেই প্রচার চলাকালীন মারপিটের ঘটনা ঘটেছিল। প্রয়াত বিধায়ক ঘনিষ্ঠ হাতে গোনা কিছু লোক প্রার্থীকে অন্য রুটে নিয়ে যেতে চাইলে স্থানীয় সংগঠনের উপর তাঁরা চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তৃণমূল স্থানীয় সংগঠনের লোকজন পাল্টা চড়াও হলে, তাঁরা পালিয়ে যান। এমনকী প্রচার পর্বে শেষের দিকে এই পঞ্চায়েতেই এসেছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাতেও ব্যাপক সাড়া পড়েছিল এই পঞ্চায়েতে। যদিও কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা খারাপ থাকা নিয়ে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। নির্বাচনী ফলাফল বেরতে দেখা যায়, এই পঞ্চায়েতের সিংহভাগ বুথেই বিজেপি একক সংখ্যায় আটকে গিয়েছে। উপনির্বাচনে পঞ্চায়েত ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, তৃণমূল পলাশী-২ পঞ্চায়েতে ২৭৮০, মিরা-১ পঞ্চায়েতে ২৪৮৮, বড়ো চাঁদঘর পঞ্চায়েতে ৬২০০, মিরা-২ পঞ্চায়েতে ৪৪৬৩, পলাশী-১ পঞ্চায়েতে ৫৩৪০, কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত ২০৮৫, পানিঘাটা পঞ্চায়েতে ৫৪৬৫, দেবগ্রাম পঞ্চায়েতে ৪০৩৮, জুড়ানপুর পঞ্চায়েতে ২৫৯২ ভোটে লিড পেয়েছে তৃণমূল। এমনকী বিধানসভার ৭৪টি বুথে একক সংখ্যক ভোট পেয়েছে বিজেপি। কালীগঞ্জ ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা জয় নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম। আমাদের শুধু লক্ষ্য ছিল অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ভেঙে দেওয়া। সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। ব্লকের শক্তিশালী সংগঠনের কারণেই কালীগঞ্জ আমাদের রেকর্ড লিড হয়েছে। কৃষ্ণনগর সংগঠন হিসেবে বিজেপির সহ-সভাপতি সৈকত সরকার বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষরা আমাদের উপর ভরসা দেখিয়েছেন। কালীগঞ্জের উপ নির্বাচনে এটাই আমাদের বড়ো জয়। আমরা অধিকাংশ হিন্দু বুথেই লিড পেয়েছি।