• বহরমপুরে স্কুলে ঢুকে নাবালিকাকে অপহরণের ছক
    বর্তমান | ২৬ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বহরমপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এক নাবালিকাকে অপহরণের চেষ্টায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল এলাকায়। বুধবার দুপুরে গোরাবাজার ফেরিঘাট সংলগ্ন বাপুজি পাঠাগার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। এক মহিলা প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া এক বালিকাকে অপহরণ করার চেষ্টা করে। চকোলেটের লোভ দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বুঝতে পেরে অভিযুক্ত মহিলাকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখেন। পুলিস গিয়ে অভিযুক্তকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

    পুলিস জানিয়েছে ধৃতের নাম, মামনি সিংহ রায়। তার বাড়ি বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকায়। ধৃতের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে মুর্শিদাবাদ জেলা আদালতে তোলা হবে। বহরমপুর থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে, এই অপহরণের পিছনে মোটিভ কী ছিল। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার প্রার্থনার সময় মামনি ওই স্কুলে ঢুকে রেইকি করে। ওইদিন স্কুলে ঢুকে প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে সখ্যতা তৈরির চেষ্টা করে। বালিকাকে রবার ব্যান্ড ও চুলের ক্লিপ উপহার দেয়। বালিকাকে অভিযুক্ত মহিলা বলে, ‹তোমার মা আমাকে পাঠিয়েছে। এবার থেকে তুমি টিউশন পড়বে আমার কাছে।› বিষয়টি নজরে আসে প্রধান শিক্ষিকার। তিনি ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করে বিষয়টি জানতে পারেন। মঙ্গলবার রাতে ওই ছাত্রীর বাবাকে ফোন করে গোটা বিষয়টি জানান তিনি। এরপর বুধবার বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা এবং অভিভাবকেরা সতর্ক ছিলেন। 

    বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, ওই মহিলা মঙ্গলবারও বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। পরিকল্পনা করে অপহরণ করার চেষ্টা করছিল। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার তৎপরতায় সেটা হয়নি। 

    বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ঝুমা খাঁ বলেন, প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম কোনও ছাত্রীর অভিভাবিকা উনি। আমরা বিদ্যালয়ের অধিকাংশ অভিভাবক অভিভাবিকাকো চিনি। সে কারণে সন্দেহ হয়। আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কে? তখন ওই মহিলা বলে, আমি তিথিকে খুঁজছি। মহিলা কথা বলে বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপরে ছাত্রীকে যখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তখন সে জানায়, ওই মহিলাকে ও চেনে না। ওই মহিলাকে আমি জিজ্ঞাসা করি, তিথি আপনাকে চেনে না বলছে। আমি বিদ্যালয়ে ঢুকে গিয়ে তিথির বাবাকে ফোন করে গোটা বিষয়টি জানাই। মঙ্গলবার এই ঘটনার পর বুধবারও আমরা একটু আতঙ্কে ছিলাম। 

    তিনি আরও বলেন, বুধবার আমরা বিদ্যালয়ে সমস্ত অভিভাবক অভিভাবিকাদের বিদ্যালয়ে ঢোকা বারণ করে দিই। তারপর আজ জানলা দিয়ে দেখতে পাই ওই মহিলা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে ভিতরে ডেকে আনি। তিথির মাকে বসিয়ে রেখে কথা বলাই। কেউ কাউকে চেনে না। অভিভাবকরা ওই মহিলার অভিসন্ধি বুঝতে পেরে পুলিসে খবর দেন। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। পুলিস এবার তদন্ত করুক। ওই মহিলা যে খারাপ উদ্দেশ্যে এসেছিল, সেটা আমাদের তৎপরতায় সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি।  জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) অপর্ণা মণ্ডল বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আমরা পুলিসকে জানিয়েছি। এসআইয়ের কাছ থেকে গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আমরা তা হাতে পাব। একজন বহিরাগত কীভাবে স্কুলে ঢুকে গেল, সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)