কর ও জরিমানা বাবদ অনাদায়ী কয়েক কোটি, সঙ্কটে কর্পোরেশন
বর্তমান | ২৬ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কর্মীদের বেতন থেকে আনুসাঙ্গিক খরচ জোগাতে হিমশিম দশা আসানসোল পুরসভার। দিন দিন খরচের বহরও বেড়েই চলেছে। অথচ, কর ও জরিমানা আদায় হচ্ছে না। ফলে ক্রমেই আর্থিকভাবে রুগ্ন হয়ে পড়ছে পুরসভা। যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে উন্নয়নে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এই অবস্থা থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে পুরসভা। এবার কর আদায়ে কোমর বেঁধে নামতে চলেছে তারা। পাশাপাশি, জরিমানা আদায়েও জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার মেয়র বিধান উপাধ্যায় ও পুরসভার কমিশনারের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এমন কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্থিক হাল ফেরাতে কারখানার অবৈধ নির্মাণগুলিকেই হাতিয়ার করতে চলেছে কর্তৃপক্ষ। আসানসোল পুর এলাকায় ১১টি বেসরকারি কারখানা চিহ্নিত হয়েছে। সবমিলিয়ে হাজার হাজার বর্গফুট অবৈধ নির্মাণ রয়েছে। পুরসভা নির্দেশ দিয়েছিল, হয় জরিমানা দাও। না হলে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দাও। দেড় বছর আগে নোটিস দিলেও এখনও কারখানা কর্তৃপক্ষগুলি কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নেয়নি। এনিয়ে উচ্চবাচ্য ছিল না পুরসভারও। যা নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয় ‘বর্তমান’-এ। তারপরই নড়েচড়ে বসে পুরসভা। সূত্রের খবর, রথযাত্রা পেরোলেই আগামী মঙ্গলবার থেকে অভিযানে নামবে কর্তৃপক্ষ। ওইদিন একটি কারখানার বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হবে। শুক্রবার আরও একটি কারখানায় অভিযান হবে। এই দুই কঠোর পদক্ষেপকে দৃষ্টান্ত হিসেবে খাড়া করে অন্য কারখানাগুলিকে বার্তা দিতে চাইছে পুরসভা। যাতে তারা জরিমানা দিয়ে কারখানা বাঁচাতে তৎপর হয়। আসানসোল পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, আয় বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বকেয়া কর ও জরিমানা দ্রুত আদায় করা হবে। দশটি বরো অফিস, ১০৬টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসানসোল পুরসভা। ১৪ লক্ষেরও বেশি মানুষের পানীয় জল থেকে নিকাশির ব্যবস্থা করা, বিস্তীর্ণ এলাকার সড়ক নির্মাণ থেকে আলোর ব্যবস্থা করতে বিপুল খরচ। কর্মীদের বেতন দেওয়া অফিস চালানোর খরচই মাসে ৬ কোটির বেশি। এই অবস্থায় আয় না থাকায় কোষাগারের হাল অত্যন্ত খারাপ বলে পুরসভা সূত্রে খবর। সেক্ষেত্রে দুটি বড় বিষয় সামনে এসেছে। এক, জরিমানা আদায়ে ব্যর্থতা। দুই, বকেয়া কর আদায়ে কঠোর পদক্ষেপের অভাব। জানা গিয়েছে, দেড় বছর আগে ১১টি কারখানার অবৈধ নির্মাণের জন্য মোটা টাকা ফাইন হয়। ফাইনের অঙ্ক ছিল প্রায় ৫০০ কোটি। দেড় বছর আগে সেই জরিমানা ধার্য হলেও তা আদায় হয়নি। এনিয়ে বিস্তর প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া আসানসোল পার্কিংগুলি থেকেও যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তাও পুরসভা পায়নি বলে খবর। সেখানেও কোটি কোটি টাকা অনাদায়ী হয়ে পড়ে রয়েছে। এছাড়া বহু বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পুরসভার কর দেয় না। বহু অসাধু গৃহস্থও ট্যাক্স দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় পুরসভার ‘আমদানী আঠান্নি, খরচা রুপাইয়া’ দশা। যার থেকে বের হতে কারখানাগুলির বেআইনি নির্মাণ ভাঙার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার ছাড়া আর কোনও উপায় নেই পুর কর্তৃপক্ষের।