নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের টাকা হরির লুট হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁদের দেওয়া ফি এর টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ফিক্সড করে রাখা হয়েছিল। সেই টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। এই কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রাঘব বোয়ালদের আদৌ শাস্তি হবে তো? এখন সেই প্রশ্নই গোলাপবাগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাঁদের সন্দেহের যথেষ্ট কারণও রয়েছে। কেলেঙ্কারির পর প্রায় এক বছর চারমাস কেটে গিয়েছে। কোনও রাঘব বোয়াল জালে জড়ায়নি। এমনকী, সিআইডি যাকে এই ঘটনার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে সেও ফেরার রয়েছে। এতদিন পরও তদন্তকারী সংস্থা কেন তার নাগাল পেল না তা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে। আধিকারিকদের দাবি, সিআইডি যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। বহু চ্যালেঞ্জিং ঘটনার পর্দাফাঁস তারা করেছে। বহু দাগী অপরাধীকেও তারা জালে তুলতে সময় নেয়নি। সেই সংস্থা কেন অভিযুক্তকে পাকড়াও করতে পারছে না তা অনেকেরই বোধগম্য হচ্ছে না।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র বলেন, এতদিন পরও মূলচক্রীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় অবাক হয়ে যাচ্ছি। নিচুস্তরের কয়েকজনের পক্ষে কী এতবড় দুর্নীতি করা সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করেন। তাঁদের টাকা এভাবে যারা নয়ছয় করেছে তাদের প্রত্যেকের সাজা হওয়া দরকার। তা না হলে আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছুই লুট হয়ে যাবে। আর এক ছাত্র বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম দুর্নীতি হতে পারে বলে ধারণা করা যায় না। ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা ব্যক্তিগত কয়েকজনের অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর হলেও কেন তা প্রথমে জানা গেল না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রয়েছে। বহু নামী ব্যক্তিক্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ আসনে বসেছিলেন। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এভাবে কালিমালিপ্ত হওয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রাক্তনীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, অর্থ সংক্রান্ত কেসে তদন্ত হতে সময় লাগে। এটা ঠিকই। কিন্তু এই কেলেঙ্কোরির সঙ্গে যুক্তদের অনেকেই চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। তারপরও তারা গ্রেপ্তার হয়নি। যাদের অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাঁরা সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। মোটা অঙ্কের টাকা বেতন পান। তারপরও তাঁরা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়ার দাবি তুলেছেন প্রাক্তনীরা। আর এক আধিকারিক বলেন, আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ভালোফলের জন্য সংবাদ শিরনামে আসতো। এখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভালোভাবে তদন্ত করলে কোঁচো খুঁড়তে কেউটে উঠে আসবে। ওই ঘটনার আগেও আর কিছু কেলেঙ্কারি হয়েছে কি না সেটাও তদন্ত হওয়া দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিআইডির পাশাপাশি ইডিও এই ঘটনায় তদন্তে নেমেছে। এরাজ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থা বহু ঘটনার তদন্তে নেমে মাঝপথে থমকে গিয়েছে। এক্ষেত্রেও তেমনটা হবে না তো? এখন সেসব প্রশ্নই বিশ্ববিদ্যালয়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। ফাইল চিত্র