• কৃষ্ণনগর পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাব তৃণমূল কাউন্সিলারদের একাংশের
    বর্তমান | ২৬ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি. কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন রীতা দাসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন পুরসভার কাউন্সিলারদের একাংশ।‌ বুধবার দুপুরের দিকে ১৫জন কাউন্সিলার এই প্রস্তাব আনেন। তার মধ্যে তৃণমূলের ১৩ জন, একজন কংগ্রেস এবং একজন নির্দল কাউন্সিলার অনাস্থায় সই করেছেন। ১৫ দিনের মধ্যে এই অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সাধারণ সভা ডাকার জন্য বলা হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত গোটা বিষয়টি তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর নির্ভর করছে। কৃষ্ণনগর পুরসভার মোট ২৫জন কাউন্সিলার। তার মধ্যে একজন অবশ্য প্রয়াত হয়েছেন। 

    কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন রীতা দাস বলেন, এই অনাস্থা পুরসভার চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে নয়। এটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের কিছু কাউন্সিলার অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। বিগত তিন বছরে কৃষ্ণনগর পুরসভায় অনেক কাজ হয়েছে। অনেক নতুন নতুন পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু, কিছু কাউন্সিলার তা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মেনে নেব।

    বুধবার চেয়ারপার্সন বিরোধী কাউন্সিলররা এই অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। সেই চিঠি তাঁরা চেয়ারপার্সন রীতা দাসকে দেন। তাতে ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার সুমিতা দাস, ৩ নম্বরের মিলন ঘোষ, ১০ নম্বরের অসীম সাহা, ১২ নম্বরের মলয় দত্ত, ১৩ নম্বরের শিশির কর্মকার, ১৫ নম্বরের তথা ভাইস চেয়ারম্যান নরেশচন্দ্র দাস, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুমিত ঘোষ, ১৮ নম্বরের আবুল হোসেন, ১৯ নম্বরের সৌগত কৃষ্ণ দেব, ২১ নম্বরের বুলবুল সরকার, ২৩ নম্বরের শুভশ্রী দাসবিশ্বাস, ২৪ নম্বরের প্রকাশ দাস, ২৫ নম্বরের পলাশ দাস স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়াও অনাস্থা প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলার অসিত সাহা, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস কাউন্সিলর শান্তশ্রী সাহা। 

    এব্যাপারে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তথা তৃণমূলের শহর সভাপতি মলয় দত্ত বলেন, এখনই আমরা এই বিষয়ে কিছু বলব না। কংগ্রেস কাউন্সিলার শান্তশ্রী সাহা বলেন, চেয়ারপার্সনের স্বজনপোষণ, দুর্নীতি এবং ১৪ নম্বরে ওয়ার্ডে উন্নয়নমূলক কাজে বঞ্চনার শিকার হয়েছে। তাই অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছি‌।

    প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগর পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলারদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠছে। এই দ্বন্দ্ব নতুন নয়। এর আগে একাধিকবার হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকী পুরসভার কর্মীদের উপর আক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে। চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের একাংশ কাউন্সিলার। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

    এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশন ঘিরে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে। বিরোধী কাউন্সিলারদের অভিযোগ, ওই বাজেট অবৈধভাবে পাশ করানো হয়েছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন মে মাসে কৃষ্ণনগর পুরসভার তরফ থেকে ডিএলবি’র কাছে নতুন করে বাজেট অধিবেশন ডাকার জন্য আবেদন জানানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বোর্ডের সাধারণ সভা ডাকার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। ফলে নতুন অর্থ বছরের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কৃষ্ণনগর পুরসভার বাজেট চূড়ান্ত করা যায়নি। যার জেরে শহরের সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ কার্যত স্তব্ধ হয়ে রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)