নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: পূর্ব মেদিনীপুরে জনসংযোগে নয়া নজির গড়লেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌজন্যে, দীঘার রথযাত্রা উৎসব। বুধবার রাজ্যের নতুন তীর্থস্থানে আসার পথে জনস্রোতে ভাসলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ গোমরা। রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি। দুপুরের পর সূর্যের আর দেখা মেলেনি। মেঘেই ঢাকা ছিল আকাশ। আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাস পেয়েই হেলিকপ্টারে আসেননি মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা থেকে সড়ক পথেই রওনা দেন দীঘা। সেই খবর উল্কার গতিতে চাউর হয়ে যায় গোটা জেলায়। দুর্যোগকে হারিয়ে কোলাঘাট থেকে দীঘা পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে জমে যায় থিকথিকে ভিড়। মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর সুযোগ হাতছাড়া করেননি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।
কোলাঘাটের সেতু থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের সীমানা। সেই কোলাঘাট থেকে সোনাপেত্যা টোলপ্লাজা, রাধামণি, মেছেদা, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, বাজকুল, হেঁড়িয়া, মারিশদা, দেশপ্রাণ কলেজ সহ প্রতিটি মোড়েই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই। মুখ্যমন্ত্রী হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সবার সঙ্গেই। ৪টা ৩৫ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ঢোকে কাঁথি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে হাজির ছিলেন জেলা সভাপতি পীযূষ পণ্ডা, বিধায়ক তরুণ মাইতি সহ আরও জেলার একাধিক নেতা-নেত্রী। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেই সমস্বরে স্লোগান ওঠে—‘জয় জগন্নাথ’, ‘মুখ্যমন্ত্রী সু-স্বাগতম’। কাঁথি শহরে সাধারণ মানুষের এমন উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন জননেত্রী। হেঁটে যান বেশ খানিকটা পথ। কুশলও বিনিময় করতে দেখা যায় অনেকের সঙ্গে। কোথাও স্কুলফেরত ছাত্রীদের জড়িয়ে ধরেন। আবার কোথাও উপস্থিত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রণামও করেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে কোলাঘাট থেকে দীঘা পর্যন্ত জাতীয় সড়কে পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন করা ছিল। আগে থেকেই দীঘাগামী সড়কের দু’ধারে পর্যটন দপ্তর এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের পক্ষ থেকে ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছিল। প্রতিটি ফ্লেক্সে ছিল জগন্নাথ মন্দির ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। বিকাল ৩টা ২০ মিনিট নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় রূপনারায়ণের উপর শরৎ সেতু পার করে কোলাঘাটে ঢোকে। সেখানে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক, জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী, পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ কনভয়ে যোগ দেন। কোলাঘাট থানার অন্তর্গত হলদিয়া মোড়ে বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র ও জেলা তৃণমূল সভাপতি সুজিত রায় ছিলেন। তমলুক থানার সোনাপেত্যা টোলপ্লাজার কাছে স্কুল পড়ুয়ারা মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। সেখানে জেলা তূণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়, চিত্ত মাইতি প্রমুখ ছিলেন। রাধামণি, নিমতৌড়ি সহ প্রতিটি রাস্তার প্রতিটি মোড়েও অভ্যর্থনা জানানো হয় মমতাকে।
দীঘায় প্রভুর নব আলয় দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তরা আসছেন। আন্তর্জাতিক পরিচিতিও বেড়েছে দীঘার। এই প্রথম বালুমাটিতে রথের চাকা গড়াবে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। এমন ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে ভক্ত-ভিড়ে গমগম করছে দীঘা। আজ, বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে সূত্রের খবর। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন রথযাত্রা উৎসবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচ মন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় দীঘায় ঢুকতেই রাস্তার উপর ফুলের পাঁপড়ি ছড়িয়ে স্বাগত জানান উপস্থিত ভক্তরা। মন্দির থেকে
মাসির বাড়ি পর্যন্ত গোটা রাস্তাজুড়ে বাহারি আলোর রোশনাই। মাইকে ভাসছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ও ইন্দ্রনীল সেনের গাওয়া গান-‘তোমায় মোদের আস্থা, তোমায় মোদের বিশ্বাস, তোমায় ভালোবাসা। পুণ্য করো, পুণ্য করো, পুণ্য করো। ধরায় এসো, ভালোবাসো। জয় জগন্নাথ। জয় জগন্নাথ। জয় জগন্নাথ জয় হে...।’ এ এক অন্য দীঘা! নিজস্ব চিত্র