বিলিতি ঘোড়ায় টানা রথে চড়বেন জগৎপ্রভু, মাহেশে ঐতিহ্যের ৬২৯ বছর
বর্তমান | ২৬ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: ৬২৯ বছরের ঐতিহ্য আর একাধিক জনশ্রুতিকে সঙ্গী করে এবারও পথে নামবে মাহেশের রথ। জগৎপ্রভু লীলা করতে যাবেন মাসির বাড়ি। বিলেত থেকে আনা সাদা ও নীল রঙের ঘোড়ায় টানা রথে চেপে মাসির বাড়ি যাবেন মাহেশের জগন্নাথ। ইতিমধ্যেই সেবায়েত থেকে প্রশাসন, স্থানীয় পুরসভার স্তরে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। সেজে উঠছে সম্পূর্ণ লোহার তৈরি রথ। ঝাঁ চকচকে করে তোলা হচ্ছে রথের ১২টি চাকা আর রথের চূড়ার বর্ণময় সাজ। ঐতিহ্যবাহী রথকে নিয়ে তৎপরতার অন্ত নেই প্রশাসনে। ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা। জেলাশাসক থেকে শুরু করে পুলিস কমিশনার দফায় দফায় পরিদর্শন করেছেন জগৎপ্রভুর যাত্রাপথ। পুণ্যার্থীদের জন্যও বহাল করা হয়েছে একাধিক নিরাপত্তার মোড়ক।
বস্তুত সব মহলেই চলছে প্রস্তুতি। যে রথযাত্রার কথা সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র লিখে গিয়েছেন তাঁর উপন্যাসে, সেই রথ নিয়ে সব মহলেই আগ্রহ থাকে। শুধু বঙ্কিমচন্দ্র নয়, মাহেশের রথের সঙ্গে জুড়ে আছে স্বয়ং পরমহংসের স্মৃতি। তিনি এসেছিলেন মাহেশের রথ দর্শনে। এক, দুই করে পায়ে পায়ে পেরিয়ে আসা রথযাত্রার সঙ্গে জুড়েছে অনেক কিছু। কিন্তু অমলিন হয়ে রয়ে গিয়েছে তার মোহন ঐতিহ্য। ২৭ জুনের সেই বিশেষ মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে সেবায়েত মহলে তৎপরতার অন্ত নেই। মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত পিয়াল অধিকারী জানিয়েছেন, স্নানযাত্রার পরে জ্বরতপ্ত শরীরে চন্দনের লেপ নিয়েছিলেন প্রভু। ২৪ জুন প্রভুকে কবিরাজি পাচন দেওয়া হয়েছে। ২৫ জুন সকালেই প্রথা মেনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন জগন্নাথ। তারপর দুপুরে তিনি ভোগ গ্রহণ করে চাতালে নেমে আসেন সকলকে দর্শন দিতে। ২৫ ও ২৬ জুন মিলিয়ে প্রভুর নবযৌবন উৎসব পালিত হবে। প্রাণপ্রতিষ্ঠা, চক্ষুদান সহ একাধিক অনুষ্ঠান নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হবে। তারপরে ২৭ জুন বিকেলে চারটেয় টান পড়বে রথের রশিতে। ছয় শতাব্দী পার করা ইতিহাস এক লহমায় উস্কে যাবে। হাজার হাজার মানুষের ‘জয় জগন্নাথ’ ধ্বনির সঙ্গে বলভদ্র ও সুভদ্রাকে নিয়ে জগন্নাথদেব রওনা দেবেন মাসির বাড়িতে। পিয়াল অধিকারী বলেন, প্রস্তুতির কাজ এখন তুঙ্গে। সাজিয়ে তোলা হচ্ছে রথ। সেজে উঠছে মন্দির। সব রীতিনীতিই পালন করা হবে। এবার বিপুল ভক্ত সমাগমের ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি। সেই সঙ্গে বিশিষ্ট অভ্যাগতরাও থাকবেন।
মাহেশের রথের ঐতিহ্য যেমন সুপ্রাচীন। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৪০ বছর আগে বিলেত থেকে জগৎপ্রভুর জন্য ঘোড়া আনা হয়েছিল। সম্পূর্ণ তামার তৈরি দু’টি ঘোড়ার একটির রং নীল, অন্যটি সাদা। রথে থাকেন সারথি। আছে ১২টি ধাতব চাকা। এখন সেই চাকা গড়ানোর অপেক্ষা।