নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সর্বভারতীয় ভোক্তা সূচক (কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স) অনুযায়ী রাজ্য সরকারকে কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দিতে হবে না। ষষ্ঠ বেতন কমিশন এমন সুপারিশই করেছিল সরকারের কাছে। শুধু তাই নয়, সুপারিশে এটাও বলা হয়, রাজ্য সরকার ডিএ কতটা বৃদ্ধি করবে, তা সরকারের আর্থিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। বছরে কতবার ডিএ বৃদ্ধি করতে হবে সেব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি সুপারিশে। মাঝে মাঝে (টাইম টু টাইম) ডিএ বৃদ্ধি করার কথা বলেছিল ষষ্ঠ বেতন কমিশন। প্রসঙ্গত সর্বভারতীয় কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (এআইসিপিআই) ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মতো রাজ্য কর্মীদের ডিএ নির্ধারণ নিয়ে অনেক বছর ধরে কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন চলছে। পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বকেয়া ডিএ নিয়ে যে মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে চলছে, সেখানে এআইসিপিআই প্রধান ইস্যু। এই পরিপ্রেক্ষিতে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের ডিএ সংক্রান্ত বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে প্রশাসনিক ও কর্মী মহল।
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বে গঠিত ষষ্ঠ বেতন কমিশন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ তার সুপারিশ রাজ্য সরকারের কাছে পেশ করে। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার কিছুদিনের মধ্যে ‘রোপা-২০১৯’ এর বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যার ভিত্তিতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বর্ধিত বেতন হার ও অন্যন্য সুযোগ-সুবিধা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়। রোপা কার্যকর করলেও, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশটি সরকার প্রকাশ করেনি। এনিয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন ও হাইকোর্টে মামলা হয়। হাইকোর্ট সম্প্রতি কমিশনের সুপারিশ পয়লা জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশ্যে আনতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। বেতন কমিশনের সুপারিশের বিস্তারিত কপি বুধবার প্রশাসনিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও অর্থ দপ্তরের ওয়েবসাইটে এদিন রাত পর্যন্ত তা আপলোড করা হয়নি। এতে দেখা যাচ্ছে, সুপারিশের প্রথম খণ্ডের ১২.৪ অনুচ্ছেদে ডিএ নিয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। তার আগে ১২.৩ অনুচ্ছেদ রাজ্য সরকারের আর্থিক সমস্যা ও আর্থিক দায়দায়িত্ব বিষয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, বিপুল ঋণ পরিশোধের দায় রাজ্য সরকারের আছে। কর্মীদের বেতন, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন, ঋণের সুদ মেটানো, পুরসভা, পঞ্চায়েত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আর্থিক অনুদান, সরকারি অফিস চালানোর জন্য বিপুল খরচ করতে হয়। এর পাশাপাশি উন্নয়নমূলক ও সামাজিক প্রকল্প খাতে সরকারের বিপুল খরচ হয়। তারপরের অনুচ্ছেদে ডিএ প্রসঙ্গে সুপারিশ দিয়েছে কমিশন। রোপা-২০১৯ বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে উল্লেখ করা হলেও, ডিএ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। এনিয়ে কর্মী মহলে অভিযোগ ছিল। বেতন কমিশনের মূল সুপারিশে ডিএ নিয়ে কী বলা হয়েছিল, সেটা জানানোর দাবি ছিল কর্মীদের। সেটা এদিন প্রকাশ্যে এসে গেল।