• স্কুলের জমি দখল করে গ্যারাজ বাম নেতার
    এই সময় | ২৬ জুন ২০২৫
  • আশিস নন্দী, মধ্যমগ্রাম

    স্কুলের সরকারি জমির একাংশ দখল করে সাইকেল এবং বাইকের গ্যারাজের রমরমা ব্যবসা চালানোর অভিযোগ উঠল সিপিএমের এক নেতার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্কুল বিল্ডিংয়ের ছাদের জল বের হওয়ার পাইপ বন্ধ করে দেওয়ায় বৃষ্টির জল জমে ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে। ধরেছে ফাটলও।

    দেওয়াল ঘেঁষে গ্যারাজ চলায় ক্লাসরুমের জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। সংস্কারের জন্য বরাদ্দ টাকা স্কুল ফান্ডে পড়ে রয়েছে। অথচ সংস্কার করতে পারছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ।

    সরকারি স্কুলের জমি জবরদখল হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনো নিয়ে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে মধ্যমগ্রামের কবিগুরু শিক্ষা নিকেতন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে।

    জবরদখল সরাতে এর আগেও একাধিকবার গ্যারাজ মালিককে বলা হলেও কোনও সুরাহা পাননি প্রধান শিক্ষিকা। বিষয়টি জানানো হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ও মধ্যমগ্রাম পুরসভাকেও।

    যদিও জবরদখলকারী সিপিএম নেতার দাবি, মাপজোক করার পর সত্যিই যদি জমি দখল হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে স্কুলের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

    মধ্যমগ্রাম শহরে সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলির অন্যতম কবিগুরু শিক্ষা নিকেতন। মধ্যমগ্রাম পুরসভার সোদপুর রোডের ধারে একেবারে স্টেশন লাগোয়া পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লি এলাকাতেই রয়েছে স্কুলটি।

    ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই স্কুলে প্রি -প্রাইমারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১১০। স্কুলের পূর্ব দিকে রয়েছে একটি ক্লাস ঘর। সেই বিল্ডিংয়ের একেবারে লাগোয়া একটি জমির মালিক এলাকার সিপিএম নেতা অরূপ বোস ওরফে কুরুর এক আত্মীয়।

    স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই জমির মালিকানা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। স্কুলের জমির একাংশ জবরদখল করে গজিয়ে উঠেছে সাইকেল এবং বাইকের গ্যারাজ। অভিযোগ, সরকারি স্কুলের জমি দখল করে বকলমে ওই গ্যারাজটি চালাচ্ছেন সিপিএম নেতা অরূপ বোস ওরফে কুরু।

    প্রতিদিন কয়েকশো সাইকেল ও বাইক ওই গ্যারাজে রেখে কর্মস্থলে যান সাধারণ মানুষ। স্কুলের সামনের ফুটপাথ এবং স্কুলের বাউন্ডারি দেওয়াল ঘেঁষেও সাইকেল রাখা হয়। স্কুলের বাউন্ডারির দেওয়ালে সাইকেল, বাইক না রাখার আবেদনের ফ্লেক্স লাগানো রয়েছে।

    কিন্তু সেই আবেদন উপেক্ষা করে গ্যারাজ বানিয়ে রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন ওই নেতা। অরূপ বড় মাপের কালীপুজো করেন। সেই কালীপুজোর প্যান্ডেলও তৈরি হয় স্কুলের জমি এবং ছাদ ব্যবহার করে।

    কয়েক মাস ধরে চলে প্যান্ডেল তৈরি ও খোলার কাজ। প্যান্ডেল তৈরির কারিগররাও পুজোর আগে এবং পরে ওই স্কুলের ঘরেই রীতিমত সংসার পেতে বসে। স্কুলের ঘর দখল করে চলে রান্নাবান্না।

    স্কুল চত্বরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে মদের বোতল। পুজোর ছুটি শেষে ক্লাস চালু হলেও প্যান্ডেল খোলার কাজ শেষ হয় না। অস্বস্তিকর পরিবেশে ক্লাস করাতে হয় বলে শিক্ষিকাদের অভিযোগ।

    এই প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মাধুরী মণ্ডল বলেন, ‘স্কুলের জমি দখল করে সাইকেল, বাইকের গ্যারাজ বন্ধ করার কথা অরূপ বোসকে বারবার বলেছি। কিন্তু উনি কর্ণপাত করছেন না।

    ছাদের জল পাস হওয়ার পাইপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জল জমে ছাদ নষ্ট হয়েছে। ক্লাসের জানালা খোলা যায় না। যে কোনও সময় চাঙড় ভেঙে বিপত্তি ঘটতে পারে।’ তাঁর অভিযোগ, সংস্কারের জন্য সরকার ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে। টাকা স্কুলের ফান্ডে জমাও হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না।

    সিপিএম নেতা অরূপ বোস বলেন, ‘ওই জমিটা আমার এক আত্মীয়ের। স্কুলের জমি দখল করে কোনও গ্যারাজ করা হয়নি। গ্যারাজের অংশের জমি স্কুলের নয়। প্রধান শিক্ষিকা দলিল দেখিয়ে যদি প্রমাণিত হয়, ওটা স্কুলের জমি, তা হলে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ওই জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’

    বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি ভাস্কর সাহাও।

    জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবব্রত মণ্ডল বলেন, ‘প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। কোনও ভাবেই সরকারি জমি দখল করে বেআইনি দখলদারি করতে দেওয়া হবে না।

    স্কুল পরিদর্শককে পাঠিয়ে বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজননে আমিও পরিদর্শন করব।’ মধ্যমগ্রামের বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ যেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে স্কুলের জমিটা বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে দেয়।’

  • Link to this news (এই সময়)