এই সময়, পাণ্ডুয়া: বাবা পেশায় স্কুল শিক্ষক। তবু নিজের সন্তানকে পোলিও ও হেপাটাইটিসের টিকা দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। শিশুটির বয়স ইতিমধ্যেই এক বছর পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাকে কোনও টিকা কিংবা প্রতিষেধক দেওয়া হয়নি।
ঘটনাটি ঘটেছে, হুগলির পাণ্ডুয়ার দিঘিরপাড় লাগোয়া তেতেরপার এলাকায়। খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং হু-এর প্রতিনিধিরা শিশুটির বাড়িতে যান। কিন্তু বাড়ির লোকেরা কিছুতেই দরজা খুলতে রাজি হননি।
অগত্যা বাড়িতে নোটিস সাঁটিয়ে ফেরত চলে আসেন সরকারি আধিকারিকরা। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা মনে করছেন, সম্ভবত কুসংস্কার কিংবা কোনও অন্ধ বিশ্বাস থেকেই শিশুটিকে টিকা দিতে রাজি হননি পরিবারের লোকেরা।
জন্মের পরে শিশুকে সুস্থ্য রাখা এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিষেধক এবং টিকা নেওয়াটা এখন বাধ্যতামূলক। এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে চেষ্টার কোনও খামতি নেই সরকারের।
এর জন্য বছরে খরচ হয় কোটি কোটি টাকা। তার পরেও টিকা নিয়ে একজন শিক্ষকের এই নেতিবাচক মনোভাব দেখে অবাক হচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাণ্ডুয়া তেতেরপার এলাকার বাসিন্দা শিবায়ন মুর্মু এবং তাঁর স্ত্রী ইশিতা তাঁদের এক বছরের সন্তানকে এখনও পর্যন্ত কোনও টিকা কিংবা প্রতিষেধক দেননি। শিবায়ন বর্ধমানের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
অভিযোগ, স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা একাধিক বার বাড়িতে গিয়ে শিশুটির বাবা-মাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তাঁদেরকে রাজি করানো যায়নি। সেই খবর পেয়ে এ দিন হু-এর এর সার্ভেল্যান্স মেডিক্যাল অফিসার প্রণয় দত্ত ও ফিল্ড মনিটরিং অফিসার শেখ সোলেমন, পাণ্ডয়া ব্লকের বিডিও সেবন্তী বিশ্বাস, ব্লক স্বাস্থ্য অধিকারিক শেখ মঞ্জুর আলম-সহ স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই দম্পতির বাড়িতে যান।
তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পাণ্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বৈশাখী সরকার, পাণ্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিরাজ চৌধুরী এবং অন্যান্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বাড়ির বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে দরজা না খোলায় তাঁদেরকে কার্যত খালি হাতে ফিরে আসতে হয়। বৃহস্পতিবার শিশুটিকে নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর কিংবা বিডিও অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
পাণ্ডুয়ার ব্লক স্বাস্থ্য অধিকারিক শেখ মনঞ্জুর আলম বলেন, ‘পোলিও টিকা বা প্রতিষেধক না নিলে ভবিষ্যতে ওই শিশুটি যেমন সমস্যায় পড়বে, তেমনি অন্য শিশুদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। পরিবারের লোকেদের বোঝাতে এ দিন শিশুটির বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওনারা দরজায় খোলেননি।’
তিনি জানান, ওই বাড়িতে এই ধরনের আরও দুটি শিশু ছিল। তাদের পরিবারকে শেষ পর্যন্ত রাজি করানো গেলেও এঁরা কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।’
শিশুটির বাবা শিবায়ন মুর্মুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন তোলেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একই ধরনের অভিযোগ ওঠায় পাণ্ডুয়ার দ্বারবাসিনীতে অন্য একটি শিশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন বিডিও। বিডিও–র সঙ্গে কথা বলার পরে অবশ্য শিশুটিকে টিকা দিতে রাজি হয়েছেন তার পরিবারের লোকেরা।