মিড-ডে মিল নিয়ে ধর্মীয় বিভেদ মিটতে মিটতেও মিটল না। নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় অভিভাবক-অভিভাবকদের একাংশ। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী-১ ব্লকের নাদনঘাট থানা এলাকার কিশোরীগঞ্জ মনমোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমস্যার সমাধানে পৌঁছোনো গেল না।
স্কুলে ধর্ম অনুযায়ী মিড-ডে মিলের বাসন, খাওয়ার জায়গা থেকে রাঁধুনী-সবই আলাদা। এই বিভেদের কথা জানতে পেরে মঙ্গলবার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি। বুধবার সমস্যার সমাধান করতে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল তড়িঘড়ি বিদ্যালয়ে গিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে। উপস্থিত ছিলেন জয়েন্ট বিডিও জীবনকৃষ্ণ মণ্ডল, আইসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ ও ব্লকের মিড-ডে মিলের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক। ছিলেন স্থানীয় নসরৎপুর পঞ্চায়েতের প্রধান কানন বর্মন, উপ-প্রধান মহবিল হোসেন মণ্ডল এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস ঘোষ। বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন অভিভাবক-অভিভাবিকারাও।
বৈঠকের পরে পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, ‘‘স্কুলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে আর মিড-ডে মিল রান্না করা যাবে না। দুই সম্প্রদায়ের রাঁধুনিকেই একসঙ্গে এক জায়গায় বসে রান্না করতে হবে। হেঁশেলেও কোনও ধর্মীয় প্রাচীর রাখা যাবে না।’’ তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের কথা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর কোনও বেড়াজাল নেই। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুলে মিড-ডে মিলে ধর্মের বিভেদ মুছে যাওয়াতে খুব খুশি আমি।’’
তবে পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রধান শিক্ষক যাই দাবি করুক না কেন অভিভাবকদের অনেকেই ‘সম্প্রীতি’র এই সিদ্ধান্তে এখনও দ্বিধাবিভক্ত। দেখা গিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কোনও কোনও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আলাদা করে রান্না না হলে তাঁদের সন্তানেরা মিড-ডে মিলে খাবে না। তবে কেউ কেউ জানিয়েছেন, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে ‘সম্প্রীতি’র এই সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি। তাঁদের মতে, যে ধর্মের রাঁধুনিই রান্না করুক না কেন তাতে আপত্তি নেই।
রাঁধুনি সোনালি মজুমদার ও গেনো বিবি জানিয়েছেন, বুধবার আলাদা ভাবে রান্না হয়নি। একসঙ্গে মিলে রান্নার কাজ করা হয়েছে। মিলেমিশেই কাজ করতে চাইছেন তাঁরা।