• কয়েকজনের ভুলে সবার শাস্তি কেন! প্রশ্ন নিয়োগ বাতিল নিয়ে
    এই সময় | ২৬ জুন ২০২৫
  • এই সময়: কিছু মানুষের দোষের সাজা কেন সবাই পাবেন— সুপ্রিম-রায়ে একলপ্তে রাজ্যের ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল নিয়ে এই প্রশ্ন তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

    তাঁর প্রশ্ন, এসএসসি-র শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কয়েকজন যদি অসাধু পন্থা অবলম্বন করে থাকেন, তা হলে ২৬ হাজারের প্যানেল বাতিল হবে কেন? কয়েক জনের দুর্নীতি, অনিয়মের জন্য সবাই কেন শাস্তি পাবেন?

    চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষাকর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গত সপ্তাহেই কলকাতা হাইকোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে চলতি জটিলতায় প্রথমবার মুখ খুললেন অভিষেক।

    ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে গত ১১ বছরের কাজের খতিয়ান সংবলিত প্রায় সাতশো পাতার বই ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ বুধবার প্রকাশ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

    সাতগাছিয়ার এই সভাতেই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘কিছু লোক অর্থের বিনিময়ে চাকরি পেয়েছে, তাই পুরো প্যানেল বাতিল হলো! আমি যদি বলি, দিল্লি হাইকোর্টের যে বিচারপতি যশোবন্ত বর্মার বাড়িতে আগুন লেগেছিল, ফায়ার ব্রিগেড গিয়েছিল, তাঁর বাড়িতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা পাওয়া গিয়েছে।

    একজন বিচারপতি যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, তা হলে সমগ্র বিচারব্যবস্থাই যে দুর্নীতিগ্রস্ত, তা নয়। কয়েকজন যদি অসাধু উপায়ে চাকরি পায়, তা হলে আপনি ২৬ হাজার লোকের মুখ থেকে অন্নের গ্রাস ছিনিয়ে নিতে পারেন না। একজন–দু’জন ভুল করলে আপনি সবাইকে শাস্তি দিতে পারেন না।’

    অভিষেকের যুক্তি, কয়েক জনের দুর্নীতিকে জেনারালাইজ় করে সবাইকে দায়ী করা যায় না। সাংসদের কথায়, ‘একজন সাংসদ যদি ভুল করেন, আপনি কি সংসদ তুলে দেবেন? একজন বিধায়ক ভুল করলে বিধানসভা তুলে দেবেন? একজন পঞ্চায়েত সদস্য ভুল করলে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থাই তুলে দেওয়া হবে? তা তো হয় না।’

    অভিষেকের এই যুক্তিকে সমর্থন করেছেন চাকরিহারা শিক্ষকদের বড় অংশ। সুপ্রিম–রায়ে তথাকথিত ‘নন–টেন্টেড’ বা ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা শুভজিৎ দাস বলেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একদম সঠিক কথা বলেছেন। আমাদেরও কথা সেটাই। উনি সরকার পক্ষেরই একজন। তাই সরকারকে উনি বলুন, যাতে যোগ্যদের চাকরি বাঁচানো যায়।’

    চাকরিহারা শিক্ষাকর্মী সুজয় সর্দারের কথায়, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই যুক্তি সঠিক। কয়েকজন যদি অনিয়ম করে, তার দায় কখনও সবার ঘাড়ে পড়তে পারে না।’

    চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপ–সি কর্মীদের জন্য ২৫ হাজার এবং গ্রুপ–ডির জন্য ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই ভাতা দেওয়ার আগেই তা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে আটকে গিয়েছে।

    অভিষেক মনে করছেন, যে ভাবে দুর্নীতি, অনিয়মের যুক্তি খাড়া করে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা প্রকল্পের সব টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে, সেই প্রবণতার প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে চলতি শিক্ষক নিয়োগ বিতর্কে।

    এ দিন অভিষেক বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একশো দিনের কাজের টাকা (রাজ্যের কোষাগার থেকে) দিলে আটকাতে হবে! আবাসের টাকা দিলে আটকাতে হবে!

    এই সরকার চাকরি দিলে কোর্টে আটকাতে হবে! যাঁদের চাকরি চলে গিয়েছে, তাঁদের যদি সরকার আর্থিক সহায়তা দেয়, সেটা আবার মামলা করে আটকাতে হবে! তৃণমূল আপনাকে সাহায্য করতে চায় আর বিজেপি মানুষের মুখ থেকে ভাতের গ্রাস ছিনিয়ে নিতে চায়— এটাই পার্থক্য।’

  • Link to this news (এই সময়)